চট্টগ্রাম প্রতিনিধি : চট্টগ্রাম নগরীর জলাবদ্ধতা নিরসন কার্যক্রম পরিদর্শন করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের তিন উপদেষ্টা। শনিবার দুপুরে নগরীর বারইপাড়া খাল খনন কার্যক্রম পরিদর্শন করেন উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান, উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ও উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম। এ সময় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন তাদের সঙ্গে ছিলেন।
পরিদর্শন শেষে বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান সাংবাদিকদের বলেন, চট্টগ্রাম শহরের জলাবদ্ধতা নিয়ে কী করা যায় সেটা দেখতে আমরা এসেছি। আগামী বর্ষা মৌসুমের আগে কতটুকু করা যায় সে ব্যাপারে আজ রোববার আমরা সবার সঙ্গে সার্কিট হাউজে বসব। সেখানে একটা কর্মপরিকল্পনা নির্ধারণ করা হবে। এ কর্মপরিকল্পনা সংস্থাগুলোকে জানিয়ে দেওয়া হবে। তিনি আরও বলেন, এখানে সিটি করপোরেশন, সিডিএ শুধু নয়, ওয়াসা আছে, পোর্ট আছে, পানি উন্নয়ন বোর্ড-সংশ্লিষ্ট সবাইকে নিয়ে বসা হবে। এটা এককভাবে কেউ সমাধান করতে পারবে না। সব সংস্থা যাতে একসঙ্গে কাজ করতে পারে, সে বিষয়ে আমরা একটা উদ্যোগ নেব।
উপদেষ্টা ফাওজুল কবির খান আরও বলেন, অন্যবারের উদ্যোগের সঙ্গে এবারের উদ্যোগের পার্থক্য হলো- যেসব সংস্থা এ কাজগুলো করতে ব্যর্থ, তাদের দায়িত্ব নিতে হবে। কোনো অজুহাত শোনা হবে না। ব্যর্থতার দায়দায়িত্ব তাদের নিতে হবে। আমরা একটা দৃশ্যমান উদ্যোগ দেখতে চাই। না হলে, এসব প্রকল্পের আদৌ প্রয়োজন আছে কি না, আমরা ভেবে দেখব। তিনি বলেন, আগের কাজের হিসাব দিতে হবে। আগের কাজগুলো ফলপ্রসূ হয়েছে কি না দেখতে হবে।
পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সংস্থাগুলোর সমন্বয়ের ক্ষেত্রে বড় সমস্যা আছে। আমরা বোঝার চেষ্টা করব- প্রকল্পগুলো থেকে আমরা এ বর্ষায় কী সুফল পাব আর পরের বর্ষায় আমরা কী সুফল পাব। দীর্ঘদিনের সমস্যা একদিনে সমাধান হবে না। তবে সমাধান তো হতে হবে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ উপদেষ্টা ফারুক-ই-আজম বীরপ্রতীক বলেন, খালগুলোতে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতা কী, সেটা আমরা সরেজমিন দেখলাম। সভায় আরও বিশদভাবে জানব। চট্টগ্রাম নগরীতে বসবাসকারী কিংবা এখানে অভিজ্ঞ যারা আছেন, যারা দীর্ঘদিন এসব নিয়ে কাজ করছেন, নগর পরিকল্পনাবিদ, তাদের সঙ্গে আমরা বসব। তাদের কাছ থেকে আমরা সহযোগিতা নেব। সর্বোপরি সহযোগিতা নেব এই নগরে যারা বসবাস করেন তাদের কাছ থেকে। এই নগরে যারা বসবাস করেন তারাও কিন্তু জলাবদ্ধতার জন্য কম দায়ী নন। যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনা ফেলেন, তাদেরও কিন্তু এর জন্য একধরনের দায়ী, এ দায় তাদেরও নিতে হবে। সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় আমরা পরিত্রাণ পেতে পারি। চসিক মেয়র ডা. শাহাদাত হোসেন বলেন, এ শহর আমাদের সবার। যত সংস্থা আছে, সবাইকে একসঙ্গে নিয়ে এ শহরকে বাসযোগ্য করতে পারি, সেই চেষ্টা আমার পক্ষ থেকে অবশ্যই থাকবে। এ সময় চসিকের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের পাশাপাশি জলাবদ্ধতা নিরসন সংক্রান্ত মেগাপ্রকল্প বাস্তবায়নকারী চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (চউক) ও সেনাবাহিনীর ৩৪ ইঞ্জিনিয়ারিং কনস্ট্রাকশন ব্রিগেডের দায়িত্বপ্রাপ্তরা উপদেষ্টাদের সার্বিক কার্যক্রম অবহিত করেন।
সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে কাজ করছে সরকার : এদিকে, সকালে পতেঙ্গায় চিটাগং বোট ক্লাবে বেসরকারি চিটাগং ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটির (সিআইইউ) সমাবর্তন-২০২৫ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা ড. ফাওজুল কবির বলেন, গত তিন নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দিতে অন্তর্র্বর্তী সরকার কাজ করছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমান সরকার শতভাগ জবাবদিহিতার মাধ্যমে কাজ করার চেষ্টা করছে। সব ধরনের বৈষম্য দূর করার চেষ্টা করা হচ্ছে। শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, সব শিক্ষা ক্লাস রুমের ভেতরে পাওয়া যায় না। কিছু শিক্ষা পরিবেশ প্রকৃতি থেকে অর্জন করতে হয়। সিআইইউ’র উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীর মোহাম্মদ নুরুল আবসারের সভাপতিত্বে সমাবর্তনে বক্তব্য দেন বিশেষ অতিথি বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সদস্য অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব নুরুন আখতার, সিআইইউর প্রতিষ্ঠাতা ট্রাস্ট এডুকেশন, সায়েন্স, টেকনোলজি অ্যান্ড কালচারাল ডেভেলপম্যান্ট ট্রাস্ট (ইসটিসিডিটি) চেয়ারম্যান মোহাম্মদ জাকারিয়া খান, সিআইইউ ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান লুৎফে এম আইয়ুব প্রমুখ।