এইচটি বাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : পশ্চিম ইউরোপের দেশ ফ্রান্সে অধিকাংশ নাগরিক নতুন সংসদীয় ও প্রেসিডেন্ট নির্বাচন চান।
বুধবার প্রকাশিত একাধিক জরিপে দেখা গেছে, প্রধানমন্ত্রী ফ্রাঁসোয়া বেয়ারুর সংখ্যালঘু সরকার আগামী মাসেই ভেঙে পড়তে পারে।
তিনটি জরিপের মধ্যে দুটি অনুসারে, দুই-তৃতীয়াংশ ফরাসি নাগরিক প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ দাবি করেছেন। একটি জরিপে দেখা যায়, অতি-ডানপন্থী দল জাতীয় সমাবেশ (আরএন) সবচেয়ে বেশি সমর্থন পেলেও সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে পারেনি।
২০২২ সালে ম্যাক্রোঁর পুনর্নির্বাচনের পর থেকেই ফ্রান্স সংখ্যালঘু মন্ত্রিসভা ও বিভক্ত সংসদের কারণে রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে রয়েছে। সোমবার প্রধানমন্ত্রী বেয়ারু ২০২৬ সালের বাজেট পরিকল্পনার ওপর ৮ সেপ্টেম্বর আস্থা ভোট নেওয়ার ঘোষণা দেন। এই সিদ্ধান্তে শেয়ার ও বন্ড বাজারে অস্থিরতা দেখা দেয়।
প্রধান বিরোধী দলগুলো সরকারের বিরুদ্ধে ভোট দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, ফলে সরকারের পতন প্রায় নিশ্চিত বলে ধারণা করা হচ্ছে। সরকার ভেঙে গেলে ম্যাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করতে পারেন অথবা আগাম সংসদীয় নির্বাচন ডাকতে পারেন। তবে বিরোধী নেতাদের একাংশ মনে করেন, তার পদত্যাগই সমাধান।
ম্যাক্রোঁ ইতোমধ্যেই আগাম নির্বাচন ও পদত্যাগের সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছেন। গত বছর বাজেট অনাস্থা ভোটে তিনি পূর্ববর্তী প্রধানমন্ত্রীকে হারাতে বাধ্য হন এবং মাত্র তিন মাসের ব্যবধানে নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করা হয়েছিল।
সাম্প্রতিক জরিপগুলোতে দেখা গেছে, ফরাসি জনগণের ৫৬ থেকে ৬৯ শতাংশ আগাম সংসদ নির্বাচন চান। ইলাবে পরিচালিত এক জরিপে ৬৭ শতাংশ নাগরিক বলেছেন, আস্থা ভোটে হেরে গেলে ম্যাক্রোঁর পদত্যাগ করা উচিত।
অন্যদিকে টোলুনা হ্যারিস ইন্টারেক্টিভ জরিপে দেখা গেছে, ৪১ শতাংশ মানুষ আরএনকে পরবর্তী সরকার পরিচালনার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন, যদিও ৫৯ শতাংশ এর বিরোধিতা করেছেন। দ্বিতীয় সর্বাধিক সমর্থন (৩৮ শতাংশ) পেয়েছে ‘অরাজনৈতিক’ বা পেশাদার রাজনীতিবিদ নন—এমন কাউকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দেখতে চান নাগরিকরা।
বিশ্লেষকদের মতে, নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ বা আগাম নির্বাচন—যে কোনো পরিস্থিতিতেই ফ্রান্স দীর্ঘ রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকবে এবং বাজেট পাস নিয়ে জটিলতা তৈরি হবে।
গত বছর ফ্রান্সের জিডিপির ৫.৮ শতাংশ ঘাটতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে বেয়ারু ৪৪ বিলিয়ন ইউরোর বাজেট সংকোচনের প্রস্তাব দেন। এর অংশ হিসেবে সরকারি ছুটি বাতিল ও সরকারি ব্যয় স্থগিত করার প্রস্তাব করা হয়। তবে বিরোধীরা এ পদক্ষেপে সমর্থন দেয়নি। বামপন্থীরা ধনীদের ওপর কর বাড়ানোর প্রস্তাব করে, আর অতি-ডানপন্থীরা অভিবাসন নীতি কঠোর করার দাবি তোলে।
মরগান স্ট্যানলির বিশ্লেষকদের মতে, ২০২৬ সালের স্থানীয় নির্বাচন যত ঘনিয়ে আসবে, সংসদে রাজনৈতিক সমঝোতায় পৌঁছানো তত কঠিন হয়ে পড়বে। দলগুলো নিজেদের স্বার্থে ভোটারদের আকৃষ্ট করতে বিভিন্ন ইস্যু সামনে আনবে।
২০১৭ সালে প্রথমবার নির্বাচিত হয়ে ম্যাক্রোঁ দেশকে আধুনিকীকরণ ও অর্থনৈতিক সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন। কিন্তু টানা বিক্ষোভ, কোভিড-১৯ মহামারি এবং মুদ্রাস্ফীতির ধাক্কায় তার ব্যয় সংকোচন নীতি ব্যর্থ প্রমাণিত হয়েছে।
আস্থা ভোটের মাত্র দুই দিন পর, ১০ সেপ্টেম্বর বামপন্থী দল ও বিভিন্ন শ্রমিক ইউনিয়নের সমর্থনে নতুন বিক্ষোভ কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।