শিরোনাম
চন্দনাইশে সাতবাড়িয়াতে ফাতেহা-ই-ইয়াজদাহুম উপলক্ষে রাহমাতুল্লিল আলামিন কনফারেন্স চট্টগ্রাম-১৪ আসনে বিএনপি’র মনোনয়ন প্রত্যাশী শফিকুল ইসলাম রাহী’র লিফলেট বিতরণ ও গণসংযোগ কর্মসূচী আগামী ১৫ নভেম্বর ছাতক ওয়াপদা অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব: ঘুষে চলছে বিদ্যুৎ বাণিজ্য! জাতীয়তাবাদী সড়ক পরিবহন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন আহমদ নুর এরিক চট্টগ্রামে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দৈনিক সংবাদ সারাবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন মহেশপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন।  মহেশপুরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও শিশুদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ছাতকে দুই গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১৫ লুটপাটে থমথমে পরিবেশ, গ্রেফতার ৬ চট্টগ্রামে সম্পন্ন হলো ‘১ম আন্তঃ যুব রেড ক্রিসেন্ট বিতর্ক চ্যাম্পিয়নশীপ–২০২৫’ চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ক্লাব – পিসিআইইউ আয়োজিত।
শুক্রবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৫, ০৬:১২ অপরাহ্ন

মনু মিয়ার মসজিদে জমে আছে মালকা-মনুর প্রেমগাথা

রিপোটারের নাম / ২১৪ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

 

মো:আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): “মালকা বানুর দেশে রে, বিয়ের বাদ্য আলা বাজে রে”—এই লোকগানটি শুধু গান নয়, বরং চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালীর প্রাচীন এক ভালোবাসার ইতিহাসের অংশ। এই গানের পেছনে রয়েছে জমিদার মনু মিয়া এবং সরল গ্রামের সওদাগরকন্যা মালকা বানুর প্রেম ও বিয়ের বাস্তব কাহিনি।

 

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামে এখনো দাঁড়িয়ে আছে মনু মিয়ার নির্মিত একটি মসজিদ, যা প্রেমের সেই ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। মসজিদটি মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। প্রায় ২০x৪০ ফুট আয়তনের এই প্রাচীন মসজিদের গায়ে আজও রয়েছে নিখুঁত কারুকাজ ও গম্বুজের ছাপ। প্রবেশপথে থাকা শিলালিপিতে জানা যায়, মসজিদটি মনু মিয়া নির্মাণ করেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী খোরসা বানুর নামে।

মনু মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী মালকা বানু—তাঁর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে চিরন্তন এক লোকগাঁথা। ইতিহাস অনুসারে, মনু মিয়ার বাবা ছিলেন মোগল সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ। মনু মিয়া জমিদারি পরিদর্শনে গিয়ে একদিন বাঁশখালীর সরল গ্রামে সওদাগরের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রথমবারের মতো দেখেন মালকা বানুকে। সেই থেকেই শুরু হয় এক নিঃশব্দ ভালোবাসা, যা দিনে দিনে গভীর হয়।

 

মালকা তখন কাজির মক্তবে পড়তেন। একাধিকবার গিয়ে কাছে থেকে দেখা, কাজির মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া—সবকিছুই যেন প্রেমের গভীরতা বাড়ায়। এক সময় প্রস্তাব আসে বিয়ের। তবে মালকা শর্ত দেন—তাঁকে আনতে হবে সড়কপথে, নদীপথে নয়। নদীপথে তাঁর ভয়। মনু মিয়া তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন শঙ্খ নদে বাঁধ নির্মাণের। হাজারো শ্রমিক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের পর সড়কপথে মালকাকে আনেন তিনি। বিয়ের আয়োজন হয়, আর তার পরিণতিতে সৃষ্টি হয় আজকের এই লোকগান।

 

তাঁদের প্রেমের স্মৃতি কেবল গানেই নয়, রয়ে গেছে স্থাপত্য ও ভূচিত্রেও। মনু মিয়ার বাড়ির পাশে রয়েছে প্রাচীন দিঘি, কবরস্থান এবং ‘হাজারী দুর্গ’ নামক স্থানের ইতিহাস। সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ’র বাহিনী থাকত এ এলাকায়। ১৯৮০ সালে এখানকার মাটি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় সাড়ে ২৭ মণ ওজনের একটি মোগল আমলের কামান, যা বর্তমানে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

 

দুঃখজনকভাবে, মালকা বানুর গর্ভে কোনো সন্তান জন্মায়নি। নিঃসন্তান মনু মিয়া মৃত্যুর পর কবর হন কাজীর পাহাড় এলাকায়। প্রথম স্ত্রী খোরসা বানু স্বামীর বাড়িতেই থেকে যান, তবে মালকা বানু ফিরে যান বাবার বাড়ি বাঁশখালীতে।

 

আজও শোলকাটার সেই মসজিদ, দিঘি ও প্রেমগাঁথার কাহিনি ধরে রেখেছে ইতিহাসের নীরব ভাষ্য। গ্রামবাংলার লোকগানে বারবার ফিরে আসে সেই সুর—“মালকা বানুর দেশে রে…”

যা কেবল সুর নয়, ইতিহাসও।


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ