শিরোনাম
চট্টগ্রামে শুরু হলো যুব রেড ক্রিসেন্টের দুইদিনব্যাপী “১ম ফুটব্যাটেল টুর্নামেন্ট – ২০২৫” ৯ম তম ওফাত বার্ষিকী উপলক্ষে আজিমুশ্শান পবিত্র ঈদ-এ-মিলাদুন্নবী (দ.) মাহফিল। বিএনপি স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে সাত হাজারের বেশি নেতাকর্মীকে বহিষ্কার করা হয়েছে। সিলেটে পাথর লুটে জড়িত থাকার অভিযোগে বিএনপির নেতা সাহাব উদ্দিনকে গ্রেফতার করেছে র‍্যাব জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সভায় উপস্থিত থাকবেন প্রধান উপদেষ্টা বাংলাদেশ ইয়ূথ ক্যাডেট ফোরাম চট্টগ্রাম জেলার দ্বি-বার্ষিক সন্মেলন-২০২৫ সম্পন্ন নেপাল থেকে বাংলাদেশ ফুটবল দল রওনা দিয়েছে। নিরাপদ পানি সরবরাহের আস্থা ঢাকা ওয়াসা  ডাকসু নির্বাচনের মাধ্যমে জুলাই বিপ্লবের বিজয় হয়েছে নেপালে ছাএ জনতার বিক্ষোভে নিহত ৮
শনিবার, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০২:৪৯ অপরাহ্ন

মনু মিয়ার মসজিদে জমে আছে মালকা-মনুর প্রেমগাথা

রিপোটারের নাম / ১৭৯ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : রবিবার, ২৯ জুন, ২০২৫

 

মো:আমজাদ হোসেন, আনোয়ারা (চট্টগ্রাম): “মালকা বানুর দেশে রে, বিয়ের বাদ্য আলা বাজে রে”—এই লোকগানটি শুধু গান নয়, বরং চট্টগ্রামের আনোয়ারা ও বাঁশখালীর প্রাচীন এক ভালোবাসার ইতিহাসের অংশ। এই গানের পেছনে রয়েছে জমিদার মনু মিয়া এবং সরল গ্রামের সওদাগরকন্যা মালকা বানুর প্রেম ও বিয়ের বাস্তব কাহিনি।

 

চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার বারখাইন ইউনিয়নের শোলকাটা গ্রামে এখনো দাঁড়িয়ে আছে মনু মিয়ার নির্মিত একটি মসজিদ, যা প্রেমের সেই ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে আছে। মসজিদটি মোগল স্থাপত্যশৈলীতে নির্মিত। প্রায় ২০x৪০ ফুট আয়তনের এই প্রাচীন মসজিদের গায়ে আজও রয়েছে নিখুঁত কারুকাজ ও গম্বুজের ছাপ। প্রবেশপথে থাকা শিলালিপিতে জানা যায়, মসজিদটি মনু মিয়া নির্মাণ করেছিলেন তাঁর প্রথম স্ত্রী খোরসা বানুর নামে।

মনু মিয়ার দ্বিতীয় স্ত্রী মালকা বানু—তাঁর সঙ্গেই জড়িয়ে আছে চিরন্তন এক লোকগাঁথা। ইতিহাস অনুসারে, মনু মিয়ার বাবা ছিলেন মোগল সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ। মনু মিয়া জমিদারি পরিদর্শনে গিয়ে একদিন বাঁশখালীর সরল গ্রামে সওদাগরের বাড়িতে অবস্থানকালে প্রথমবারের মতো দেখেন মালকা বানুকে। সেই থেকেই শুরু হয় এক নিঃশব্দ ভালোবাসা, যা দিনে দিনে গভীর হয়।

 

মালকা তখন কাজির মক্তবে পড়তেন। একাধিকবার গিয়ে কাছে থেকে দেখা, কাজির মাধ্যমে খোঁজ নেওয়া—সবকিছুই যেন প্রেমের গভীরতা বাড়ায়। এক সময় প্রস্তাব আসে বিয়ের। তবে মালকা শর্ত দেন—তাঁকে আনতে হবে সড়কপথে, নদীপথে নয়। নদীপথে তাঁর ভয়। মনু মিয়া তৎক্ষণাৎ সিদ্ধান্ত নেন শঙ্খ নদে বাঁধ নির্মাণের। হাজারো শ্রমিক দিয়ে বাঁধ নির্মাণের পর সড়কপথে মালকাকে আনেন তিনি। বিয়ের আয়োজন হয়, আর তার পরিণতিতে সৃষ্টি হয় আজকের এই লোকগান।

 

তাঁদের প্রেমের স্মৃতি কেবল গানেই নয়, রয়ে গেছে স্থাপত্য ও ভূচিত্রেও। মনু মিয়ার বাড়ির পাশে রয়েছে প্রাচীন দিঘি, কবরস্থান এবং ‘হাজারী দুর্গ’ নামক স্থানের ইতিহাস। সেনাপতি শেরমস্ত খাঁ’র বাহিনী থাকত এ এলাকায়। ১৯৮০ সালে এখানকার মাটি থেকে উদ্ধার হয় প্রায় সাড়ে ২৭ মণ ওজনের একটি মোগল আমলের কামান, যা বর্তমানে চট্টগ্রামে নৌবাহিনীর তত্ত্বাবধানে রয়েছে।

 

দুঃখজনকভাবে, মালকা বানুর গর্ভে কোনো সন্তান জন্মায়নি। নিঃসন্তান মনু মিয়া মৃত্যুর পর কবর হন কাজীর পাহাড় এলাকায়। প্রথম স্ত্রী খোরসা বানু স্বামীর বাড়িতেই থেকে যান, তবে মালকা বানু ফিরে যান বাবার বাড়ি বাঁশখালীতে।

 

আজও শোলকাটার সেই মসজিদ, দিঘি ও প্রেমগাঁথার কাহিনি ধরে রেখেছে ইতিহাসের নীরব ভাষ্য। গ্রামবাংলার লোকগানে বারবার ফিরে আসে সেই সুর—“মালকা বানুর দেশে রে…”

যা কেবল সুর নয়, ইতিহাসও।


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ