জহর হাসান সাগর (সাতক্ষীরা) প্রতিনিধি: দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সীমান্তবর্তী উপজেলা তালা ও কলারোয়া নিয়ে গঠিত সাতক্ষীরা–১ সংসদীয় আসনে ধীরে ধীরে বাড়ছে নির্বাচনী উত্তাপ। চার মাস আগে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সম্ভাব্য প্রার্থী ঘোষণা হওয়ার পর থেকেই এলাকায় রাজনৈতিক আলোচনা তুঙ্গে উঠেছে।
জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ সাতক্ষীরা–১ আসনে মনোনয়ন পাওয়ার পর তৃণমূলে দলের নেতাকর্মীদের মধ্যে নতুন উদ্দীপনা দেখা দিয়েছে। নিয়মিত গণসংযোগ ও সভা-সমাবেশের মাধ্যমে তিনি এলাকাবাসীর কাছে নিজের রাজনৈতিক পরিচয়, অতীত কর্মকাণ্ড ও উন্নয়ন-পরিকল্পনা তুলে ধরছেন।
স্থানীয় বাসিন্দারা বলছেন, এবারের নির্বাচনে তাদের প্রধান দাবি হচ্ছে—রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, জলাবদ্ধতা নিরসন, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, মাদক নিয়ন্ত্রণ এবং শিক্ষাব্যবস্থার মানোন্নয়ন। এসব বিষয়কে সামনে রেখেই নির্বাচনী আলোচনা ঘোরাফেরা করছে।
সাতক্ষীরা–১ আসনটি তালা, কলারোয়া ও পাটকেলঘাটা অঞ্চল নিয়ে গঠিত। এখানে রয়েছে ২৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভা। চলতি সময়ে ভোটার সংখ্যা প্রায় ৪ লাখ ৯৩ হাজার, যা আগের নির্বাচনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে বেশি। অতীতেও এ আসনটি ছিল অত্যন্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ।
রাজনৈতিক ইতিহাস অনুযায়ী, ১৯৮৬ সালে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী, ১৯৮৮ সালে জাতীয় পার্টির সৈয়দ দিদার বখত, ১৯৯১ সালে জামায়াতের আনসার আলী, ১৯৯৬ সালের ফেব্রুয়ারিতে বিএনপির হাবিবুল ইসলাম হাবিব এবং একই বছরের জুনে আওয়ামী লীগের সৈয়দ কামাল বখত সাকী নির্বাচিত হন। এরপর ১৯৯৯ সালের উপনির্বাচনে বি. এম. নজরুল ইসলাম, ২০০১ সালে হাবিবুল ইসলাম হাবিব, ২০০৮ সালে শেখ মুজিবুর রহমান, ২০১৪ ও ২০১৮ সালে মুস্তফা লুৎফুল্লাহ এবং সর্বশেষ ২০২৪ সালে ফিরোজ আহমেদ স্বপন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।
এবারের রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির তেমন সক্রিয় উপস্থিতি না থাকায় নির্বাচনী অঙ্কে এসেছে বড় পরিবর্তন। ফলে নতুন করে আলোচনার কেন্দ্রে উঠে এসেছেন জামায়াত প্রার্থী অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ।
তিনি বলেন, “তালা–কলারোয়ার জলাবদ্ধতা একটি ভয়াবহ সমস্যা। এটি নিরসনে বড় প্রকল্প বাস্তবায়ন ছাড়া বিকল্প নেই। রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা, হাসপাতালের উন্নয়ন—এসবই আমার প্রধান অগ্রাধিকার।”
তিনি আরও বলেন, “মানুষ যেন নিরাপদে বসবাস ও ব্যবসা করতে পারে—সেটা নিশ্চিত করাই আমার প্রথম দায়িত্ব হবে।”
অধ্যক্ষ মুহাম্মদ ইজ্জত উল্লাহ দীর্ঘদিন ধরে ইসলামী রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত। ১৯৭৫ সালে রাজনৈতিক সচেতনতা শুরু করে ১৯৮০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালীন ছাত্রশিবিরের সদস্য হন। পরে তিনি জেলা সেক্রেটারি, জেলা আমির, কেন্দ্রীয় কর্মপরিষদ সদস্যসহ বিভিন্ন দায়িত্ব পালন করেন। ২০২০ সাল থেকে তিনি জামায়াতের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের সদস্য হিসেবে দায়িত্বে রয়েছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি কলারোয়া উপজেলার ফয়জুল্লাহপুর গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এবারের নির্বাচন হবে উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও রাজনৈতিক অভিজ্ঞতার এক কঠিন পরীক্ষা। শেষ পর্যন্ত ভোটাররা কাকে বেছে নেন, সেটাই এখন দেখার বিষয়।