জহর হাসান সাগর (সাতক্ষীরা প্রতিনিধি) : সাতক্ষীরার প্রাণিসম্পদ অফিসের দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তিন কোটি টাকা আত্মসাৎতের অভিযোগ উঠেছে । এই ঘটনার প্রতিকার চেয়ে সংশ্লিষ্ট দপ্তরে অভিযোগ করেছে খামারীদের মধ্যে মনিরুল ইসলাম নামে একজন ভুক্তভোগী । অভিযুক্তরা হলেন জেলা প্রানিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.এস. এম.মাহাবুবুর রহমান ও জেলা ভ্যাটেরিনারি কর্মকর্তা ডা.বিপ্লবজিৎ কর্মকার।
অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, এক বছরের বেশি জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার ও তারও দুই বছর আগে উপপরিচালক, কৃত্রিম প্রজনন হিসাবে সাতক্ষীরায় যোগদান করেন ডা. মাহাবুবুর রহমান। যোগদানের পর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হওয়া স্বত্ত্বেও আশাশুনি দেবহাটা ও শ্যামনগরের উপজেলার প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার দায়িত্ব গ্রহণ করেন তিনি। গত ২০২৩-২৪ অর্থবছরে অতিরিক্ত একটি উপজেলার দায়িত্বে থাকার সুযোগে বিভিন্ন প্রকল্পের ও রাজস্বের আনুমানিক তিন কোটি টাকা বরাদ্দ আসলেও বেশিরভাগ অর্থ এই সংশ্লিষ্ট কাজে ব্যয় না করে পকেটে পুরে আত্মসাৎ করেছেন ডা.মাহাবুবুর রহমান ও ডাঃ বিপ্লবজিৎ কর্মকার। এছাড়া ২০২৩-২৪ ও ২২-২৩ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পের পশুপাখির ঘর নির্মানের ৩৫ লক্ষটাকা বরাদ্ধ হয়। বরাদ্ধ কৃত টাকা থেকে অতি নিম্নমানের গরু, মুরগি, ছাগল ও হাঁসের ঘর তৈরি করে বাকি ২৫ লক্ষ টাকা আত্মসাৎ করেন তারা। সদ্য বছরে বিভিন্ন উপজেলার ছাগল ঘরের টাকা চেকের মাধ্যমে প্রদান করার কথা থাকলেও খামারিদের কাছ থেকে তাদের সিন্ডিকেটের মাধ্যমে গ্রাহক প্রতি ৫-৭ হাজার টাকা হাতিয়ে নেনন তারা।
অবৈধভাবে কামানো এই টাকা দিয়ে রাজধানীর ঢাকার অভিজাত এলাকায় আলিশান ফ্লাট নির্মান করেছে ডা.মাহাবুবুর রহমান বলে গুঞ্জন রয়েছে। এছাড়া ডা.বিপ্লবজিৎ কর্মকার খুলনা শহরে ৩ তলা বিলাসবহুল বাড়ি নির্মান শেষ করেছেন ইতিমধ্যে।
সাতক্ষীরার সন্তান উপপরিচালক কৃত্রিম প্রজনন, বাগেরহাট অফিসের ডা: জয়দেব কুমার সিংহ নামে এক কর্মকর্তা জানান, মাহাবুব স্যার যোগাদান করার পর বিভিন্ন উপজেলার নির্দিষ্ট মাঠকর্মীর মাধ্যমে খামারির কাছ থেকে টাকা কালেকশন করে ভাগ বাটয়ারা করতেন ডা: বিপ্লবজিৎ ও জেলা প্রাণিসম্পদ অফিসার। এইসব কাজের অন্যতম হোতা স্বৈরাচার সরকারের এজেন্ট হিসেবে কাজ করেন দেবহাটার শরিফুল, আশাশুনির নিতাই ও অন্যান্য উপজেলার অফিস সহকারী ও মাঠকর্মী। এসব বিষয় কেউ কোন প্রতিবাদ করলে ডা.মাহাবুব ও ডাঃ বিপ্লবজিৎ এর নেতৃত্বে কর্মচারীদের বিভিন্ন ভয়-ভীতি প্রদর্শন সহ শান্তি স্বরূপ বদলির মত বিষয় ঘটতো। এসব কুকর্মের মাস্টারমাইন্ড হিসাবে পরামর্শদাতা ও বাস্তবায়নদাতার কাজ করতো ডাঃ বিপ্লবজিৎ। তার হুকুম ছাড়া কোন কাজই ডাঃ মাহাবুবুর রহমান করতে পারতো না বলে সবাই জানতো। তিনি অফিসে সার্বক্ষনিক না থেকে অফিস চলাকালিন সময়ে খামারীর বাসায় গিয়ে চিকিৎসার নামে জোর জুলুম করে রোগী প্রতি ৪-৫ হাজার টাকা আদায় করতো। টানা ১৫/১৮ বছর সাতক্ষীরা জেলায় চাকুরির সুবাদে ডাঃ বিপ্লবজিৎ হয়ে উঠেন স্বৈরাচারীর প্রতিরূপ। ধরাকে তিনি সরা করতো। মূলতঃ তার সেল্টারের কারনেই নিশ্চিতে ডাঃ মাহাবুব বেপরোয়া দূর্ণীতির সাহস পান বলে অনেকেই মনে করেন।
এছাড়া কয়েকদিন আগে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর নামে ৮০টা গরু দেওয়া কথা হয়। এসকল গরু প্রদানে জন্য খামারীদের কাছ থেকে ১০ -১৫ হাজার টাকা নিতাই নামে একজন মাঠকর্মীর মাধ্যমে হাতিয়ে নেন তারা ।তাদের এই অপকর্মে প্রতিবাদ করতে গেলে বিভিন্ন কর্মচারিদের শোকজ না হলে বদলী করে জোরপূর্বক কর্মস্থল ছাড়তে বাধ্য করেন দূনীতিবাজ এই দুই কর্মকর্তা।
অভিযোগ অস্বীকার করে জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা.এস, এম, মাহাবুবুর রহমান জানান,ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীর দের জন্য যে গরু বরাদ্দ হয়েছিল সেটা ঢাকা থেকে আসে। সেটা হেড অফিস নিয়ন্ত্রন করে, আমার কোন কর্তৃত্ব নেই । আমি জেলা কর্মকর্তা হিসাবে বিভিন্ন প্রকল্পের টাকায় কোন দূর্নীতি হলে সেটা তদারকি করি, এখানে দূর্নীতি করার কোন সুযোগ নেই। রাজধানীতে ২কোটি টাকা মূল্যের নির্মান কৃত বাড়ি ও গ্রাহক প্রতি ১০হাজার টাকা ঘুষ গ্রহনের বিষয়ে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলে তিনি কোন মন্তব্য না করেই দ্রুত স্থান ত্যাগ করেন।
এদিকে জেলা ভ্যাটেরিনারি কর্মকর্তা ডাঃ বিপ্লবজিৎ কর্মকরকে মুঠোফোনে সাংবাদিক পরিচয় দিলে তিনি সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে একাধিক বার তাকে ফোন দিলে তিনি মুঠোফোনটি আর রিসিভ করেন নি।