পটিয়া (চট্টগ্রাম) থেকে সেলিম চৌধুরী:-কম খরচে লাভ বেশি, সরিষা চাষে আগ্রহ বাড়ছে চাষিদের। অল্প খরচ ও শ্রমে অধিক ফলন হওয়ায় দিন দিন সরিষা চাষে আগ্রহী হচ্ছেন পটিয়া চাষিরা। ধান আবাদ করে বেশি লাভ না পাওয়ায় এবং বাজারে সরিষার দাম ভালো পাওয়ায়ও এ ফসলের আবাদ বাড়ছে।
দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাবেক সদর মহকুমা পটিয়া উপজেলায় চলতি রবি মৌসুমে ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করেছে কৃষকরা । এতে কচুয়াই, ভাটিখাইন ও কাশিয়াইশের চাষীরা বেশি জমিতে সরিষা আবাদ করায় ইউনিয়ন গুলো এখন সরিষা ফুলের হলদে আবরণে ভাসছে।
জানা যায়, বিগত ২০২২-২০২৩ ইং অর্থ বছরে
রবি মৌসুমে পটিয়া উপজেলায় মোট ৭২ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ হয়।এবার ২০২৩-২০২৪ অর্থ বছরে সেখানে ১৩০ হেক্টর জমিতে সরিষা আবাদ করেছে কৃষকরা। সরেজমিন পরিদর্শনে দেখা যায় উপজেলার কচুইয়াই ইউনিয়নের শ্রীমাই গ্রামে চলতি মৌসুমে ৫ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেছেন স্থানীয় চাষী আবদুল জব্বার। বর্তমানে তার জমিগুলোতে সরিষার ফুল আসায় পুরো গ্রাম হলদে রুপ ধারণ করেছে।
আশায় বুক বেধেছেন কৃষক আবদুল জব্বার। তিনি আশা করছেন তার জমি থেকে তিনি এবার আশানুরূপ সরিষার ফলন পাবেন। গত বছর ও তিনি মোট ৪ হেক্টর জমিতে সরিষা চাষ করেন। এতে তিনি আশানুরূপ ফলন পাওয়ায় এ বছর কৃষি বিভাগের পরামর্শে অতিরিক্ত এক হেক্টর জমিতে বাড়তি সরিষার আবাদ করেছেন।তিনি কম খরচে অধিক লাভ হওয়ায় এ চাষে মনযোগ দিয়েছেন বলে জানান।
তার মত উপজেলার ভাটিখাইন ও কাশিয়াইশ ইউনিয়নে ও এবার লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে বেশি সরিষার আবাদ হয়েছে বলে কৃষি বিভাগ সূত্রে প্রকাশ।
জানা যায়, চট্টগ্রামের পটিয়া উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় সরিষা চাষে দিন দিন কৃষকদের আগ্রহ বাড়ছে। গত এক দশক আগেও উপজেলায় অল্প অল্প সরিষার আবাদ করতো কৃষকরা । তবে স্বল্প খরচে বেশি লাভের সম্ভাবনা থাকায় অনেক কৃষকই এখন সরিষা চাষে ঝুকে পড়ছেন। এছাড়া ও উপজেলার কেলিশহর, খরনা, শোভনদণ্ডী জিরি এবং পৌরসভার বিভিন্ন এলাকায় ও এ বছর অনেক কৃষক সরিষা চাষে আত্ম নিয়োগ করেছেন।
পটিয়া কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানায়, পটিয়া উপজেলায় কয়েক জাতের সরিষা চাষ হয়ে থাকে । এর মধ্যে বারি সরিষা-১৪ ও বিনা – ১১ বারি সরিষা-১৭-১৮ জাতের সরিষার চাষ এখানে বেশী হয়ে থাকে । চলতি অর্থ বছরে পটিয়ায় প্রায় ১৩০হেক্টর জমিতে সরিষার আবাদ করা হয়েছে। যা আগামীতে ৪/৫ শ হেক্টরে উন্নীতের লক্ষ্য নিয়ে মাঠপর্যায়ে কাজ করছে কৃষি বিভাগ ।
উপ সহকারী কৃষি কর্মকর্তা দিপেন চৌধুরী জানান,কচুয়াই ও খরনায় অনেক কৃষক কম বেশী সরিষা চাষ করেছে।তারমধ্যে আবদুল জব্বার সবচেয়ে বেশী সরিষা আবাদ করেছে।আমরা চেষ্টা করছি অন্যান্য চাষাবাদের ন্যায় সরিষা আবাদে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে। কারণ এ চাষে খরচ কম লাভ বেশী।যা আমরা বোঝাতে সক্ষম হওয়ায় এবার কচুয়াইয়ের কৃষক আবদুল জব্বার অতিরিক্ত সরিষা চাষ করেছে।
এ ব্যাপারে পটিয়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কল্পনা রহমান জানান ,সরিষার আবাদ বৃদ্ধি করে তেল উৎপাদনে সহায়ক ভূমিকা রাখা গেলে বৈদশিক মুদ্রার সাশ্রয় হবে। তাই সরকার সরিষাসহ বিভিন্ন তেল বীজ জাতীয় চাষাবাদ বাড়াতে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করতে নানা সহায়তা দিয়ে যাচ্ছে । এর জন্য কৃষকদের রবি কৃষি প্রণোদনা সার, বীজ প্রকল্পের অধীনে বীজ ও সার প্রদান করা হয়। এর ফলে চলতি রবি মৌসুমে পটিয়ায় সরিষার চাষাবাদ বেড়েছে । বর্তমানে নিজেদের উৎপাদিত ফসলে তেলের উৎপাদন বাড়ানো সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে। আমরা ও কৃষকদের এ রবি শস্যের চাষাবাদ বাড়াতে নানাভাবে উদ্বুদ্ধ করে যাচ্ছেন বলে জানান।