ইসলামি মতে কোরবানী হচ্ছে নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট ব্যক্তির আল্লাহর সন্তুষ্টি ও পুরস্কার লাভের আশায় নির্দিষ্ট পশু জবেহ করা। মুসলমানদের পবিত্র আল কোরআনের তিনটি স্থানে কোরবানির উল্লেখ আছে যার একটি পশু কোরবানির ক্ষেত্রে এবং বাকি দুটি সাধারণ ভাবনার কাজ বোঝাতে যা দ্বারা আল্লাহর নিকটবর্তী হওয়া যায়। জিলহজ মাসের ১০ তারিখ সকাল থেকে ১২ তারিখ সন্ধ্যাা পর্যন্ত আল্লাহর নৈকট্য লাভের জন্য পশু জবাই করাকে ইসলামে কোরবানি বলে।
এই কোরবান শুধু আনুষ্ঠানিকতা নয়; আত্মত্যাগের মাধ্যমে আল্লাহর সঙ্গে বান্দার ভালোবাসার অনন্য এক নিদর্শনও বটে। মুসলমানদের বছরে দুটি বড় ধর্মীয় উৎসবের মধ্যে কোরবানি হলো একটি অন্যতম উৎসব। এই দিনে সামর্থ্যবানরা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করতে পশু জবেহ এর মাধ্যমে কোরবানি করে থাকেন।
কিন্তু বর্তমানে এই কোরবানি একটি ফ্যাশনে বা প্রতিযোগিতায় পরিণত করে ফেলছে। দেখা যায় যারা কোরবানি করে তারা তাদের কোরবানির পশু ক্রয়ের দাম নিয়ে চলে প্রতিযোগিতা। শুধু তাই নয় সেই পশু দিয়ে আবার বিভিন্ন জেলায় দেখা যায় লড়াই দিয়ে জুয়ার আসর বসাচ্ছে। যে কোরবানি হওয়ার কথা আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য নিজের জিনিস কে আল্লাহর রাস্তায় সোপর্দ করা বা ত্যাগ স্বীকার করা। কিন্তু সেটা না করে আমরা কোরবানি কে গোশত খাওয়ার আনুষ্ঠানিকতার মধ্যে নিয়ে আসছি। কোবানির গোশত যেভাবে বন্টন করার কথা সেটাও হচ্ছে না সঠিকভাবে।কোরবানির সঠিক তাৎপর্য কি সেটা ফলো না করে আমরা নিজেদর মনগড়া ভাবে কোরবানি করে থাকি যা কোরআন হাদিস এর সাথে সরাসরি সাংঘর্ষিক।
আল্লাহ তাআলা বলেন, মনে রেখো! কোরবানির গোশত বা রক্ত আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না, আল্লাহর কাছে পৌঁছায় শুধু তোমাদের নিষ্ঠাপূর্ণ আল্লাহ সচেতনতা ও তাকওয়া। এই লক্ষ্যেই কোরবানির পশুগুলোকে তোমাদের অধীন করে দেওয়া হয়েছে। অতএব আল্লাহ তোমাদের সৎপথ প্রদর্শনের মাধ্যমে যে কল্যাণ দিয়েছেন, সেজন্যে তোমরা আল্লাহর মহিমা ঘোষণা করো। হে নবি! আপনি সৎকর্মশীলদের সুসংবাদ দিন যে, আল্লাহ বিশ্বাসীদের রক্ষা করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ কোনো বিশ্বাসঘাতক, অকৃতজ্ঞকে পছন্দ করেন না।’ (সুরা হজ : আয়াত ৩৭-৩৮)
এই আয়াতের দ্বারা আমরা এতটুকু বুঝতে পারলাম যে, শুধু পশু কোরবানি করেই আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য পাওয়া যাবে না। পশু কোরবানির সাথে সাথে মনের যে খারাপ পশুত্ব বাস করছে সেটারও কোরবানি করে নিজেকে পরিশুদ্ধ করে আল্লাহর কাছে সোপর্দ করতে হবে।
আল্লাহর হুকুম মেনে সেই অনুযায়ী কোরবানি করতে হবে। কোরবানির গোশত সঠিক নিয়মে বন্টন করতে হবে। ফ্রিজে রেখে এই বছরের গোশত আগামী বছর খাওয়ার নাম কোরবানি নয়। আসলে আমরা সবই জানি কিন্তু মানি না কারণ আমাদের নিয়তই সহি করতে পারি নাই।
আমাদের উচিত কোরবানি সহি অনুযায়ী করা যাতে কোরবানির মাধ্যমে আল্লাহর কাছে যাওয়া যায়। আল্লাহ্ যেহেতু বলেছে যে কোরবানির পশু, গোশত;চামড়া,হাড় কিংবা রক্ত কোন কিছুই আল্লাহর কাছে পৌছায় না। আল্লাহর কাছে পৌছায় শুধুমাত্র আল্লাহর প্রতি পুর্ণ বিশ্বাস ও তাকওয়া সুতরাং আমাদের কে সেই নির্দেশনা ফলো করে কোরবানি দিতে হবে অন্যথায় পশু কোরবানি শুধুমাত্র আনুষ্ঠানিকতাই থেকে যাবে আল্লাহর বিধান থেকে এবং আল্লাহ সন্তুষ্টি হতে বঞ্চিত হতে হবে।