এফ আই রানা,লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের পাটগ্রামে অবৈধ বোমা মেশিন দিয়ে ভূ-গর্ভ থেকে পাথর উত্তোলনকারী মেশিন মালিকদের কিছুতেই থামানো যাচ্ছে না। এসব মেশিন উচ্ছেদে সেনাবাহিনীর অভিযান চায় এলাকাবাসী। ভূ-তত্ববিদদের আশংকা একটু ভূ-কম্পন হলেই এলাকার ঘরবাড়ি স্থাপনাসহ ধ্বসে যেতে পারে।
পাটগ্রাম উপজেলায় একটি পৌর সভা সহ আটটি ইউনিয়ন। এসব ইউনিয়নে ও পৌর সভায় চলছে প্রায় দেড় শতাধিক বোমা মেশিন। ধরলা, সানিয়াযান ও তিস্তা নদীতে, আবার কোথাও বা পুকুরে এমনকি কৃত্রিম জলাশয় সৃষ্টি করে ১শ ফিট মাটির গভীর থেকে তোলা হচ্ছে পাথর ।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে যারা পাথর তুলছে তারা এলাকায় অত্যন্ত প্রভাবশালী। রাজনীতির মাঠে বিভিন্ন দলীয় বিভেদ তাদের থাকলেও পাথর উত্তোলনে থাকছে না কোন বিভেদ। মেশিন মালিকদের কোন না কোন রাজনৈতিক দলের সাথে সম্পৃক্ততা থাকায় তারা অপ্রতিরোধ্য ভাবে মেশিন দিয়ে মাটির গভীরে থেকে পাথর তুলছে। প্রতিরাতে প্রায় এক থেকে দেড় শতাধিক মেশিন চলছে।
তিন থেকে ছয় সিলিন্ডার বিশিষ্ট এসব মেশিন দিয়ে স্থান ভেদে দশ থেকে বার ট্রলি (একশ সিএফটিতে এক ট্রলি) পর্যন্ত পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। যার বাজার
মূল্য প্রায় ৬০ থেকে ৭৫ হাজার টাকা পর্যন্ত। একটি সূত্র মতে শক্তিশালী এসব মেশিন দিয়ে যেসব স্থান থেকে পাথর বালু তোলা হয় ওই স্থানে বিরাট গর্ত এবং জলাশয়ের সৃষ্টি হওয়ায় আশ পাশের আবাদী জমি ভাঙন এবং বালু পড়ে ধানের আবাদি জমি অনাবাদী হয়ে পড়ছে।
জগতবেড় ইউনিয়নের বাংলাবাড়ি গ্রামের হোসেন আলী অভিযোগ করেন ধরলা নদীতে তার জমির পাশে বোমা মেশিন বসিয়ে রাতের আধারে পাথর তুলে নিয়ে যাচ্ছে মেশিন মালিকরা। এতে তার আবাদী জমি ভাঙ্গনের কবলে পড়ছে। তিনি আশংকা করছেন দ্রুত ওই মেশিন বন্ধ করা না হলে তার জমি বিলীন হয়ে যেতে পারে। তাই এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আবেদন জানিয়ে তিনি পাটগ্রাম উপজেল নির্বাহী কর্মকর্তাকে লিখিত ভাবে অবহিত করেছেন। হোসেন আলী আরও জানান বোমা মেশিন দিয়ে শুধু পাথর বালু তোলা হচ্ছে তাই না এই মেশিনের বিকট শব্দে এলাকার শিশু বৃদ্ধ স্ব-পরিবারের কেউ রাতে ঘুমাতে পারেনা।
সরে-জমিন পাটগ্রামের বুড়িমারী জিরো পয়েন্ট থেকে জোংড়া ইউনিয়নের নন্দেরঘাট পর্যন্ত ধরলা নদীতে বসানো হয়েছে শতাধিক বোমা মেশিন তাছাড়া ফসলী আবাদি জমি ও শিংগিমারি নদীসহ বিভিন্ন এলাকায় চলছে আরও শতাধিক মেশিন। ফলে গোটা পাটগ্রাম এলাকা জুড়ে এখন সয়লাব হয়ে গেছে পাথর তোলা বোমা মেশিন দিয়ে ।
২০০৯ সালের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী খনিজ সম্পদ মন্ত্রনালয়ের সুস্পষ্ট নির্দেশনা রয়েছে মাটির গভীর থেকে মেশিন দিয়ে পাথর তোলা যাবেনা। কিন্তু এ নির্দেশ কেউ মানছেনা। স্থানীয় প্রশাসন দাবী করছে, তারা প্রায় প্রতিদিনই কোন না কোন এলাকায় অভিযান চালিয়ে মেশিন ভাঙ্গছেন। কিন্তু তারপরও চলছে। কেন চলছে, কিভাবে চলছে এর উত্তর কারো কাছে নেই।
সংশ্লিষ্ট একটি সুত্র জানায় স্থানীয় প্রশাসন হাতুড় বাটাল দিয়ে মেশিনের ওপরের আংশিক কিছু অংশ ভেঙ্গে দিচ্ছে, জরিমানা করছে কিন্তু পরে মেশিন মালিকরা সামান্য কিছু টাকা খরচ করে ওই মেশিন মেরামত করে আবার সচল করছে। জরিমানা ও আংশিক কিছু অংশ ভাঙ্গা ছাড়া প্রশাসন মেশিন মালিকদের করতে পারছেনা জেল জরিমানা। তাই এলাকাবাসী এসব মেশিন উচ্ছেদের জন্য দ্রুত সময়ে সেনাবাহিনীর অভিযান চায়।
এ বিষয়ে পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুরুল ইসলাম বলেন পাথর তোলা মেশিন উচ্ছেদের ব্যাপারে পুলিশ বিজিব কে নিয়ে টাস্ক ফোর্স গঠনের মাধ্যমে প্রতিনিয়ত অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। মেশিন মালিকদের সুনির্দিষ্ট নাম ঠিকানা এবং তাদের পাওয়া গেলে নিয়মিত মামলা দায়ের করে তাদের আইনের আওতায় আনা যায় আমরা সে ব্যাপারে পদক্ষেপ নিচ্ছি।
তবে সেনা অভিযানের ব্যাপারে তিনি বলেন এটা প্রত্যন্ত সীমান্ত এলাকা হওয়ায় সম্ভব নয়।