শিরোনাম
সাতক্ষীরায় জালিয়াতি করে ১৮ বছর শিক্ষকতায় বহাল  অবশেষে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে দৈনিক  ১২৫ টাকার পরিবর্তে ১৭৫ টাকার খাদ্য পথ্য গ্রহণের নির্দেশ  তারেক রহমান ৩১ দফা দিয়েছে হাসিনার মত স্বৈরাচার সরকার আর যাতে আসতে না পারে – ব্যারিষ্টার মীর হেলাল  গাইবান্ধায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের অভিযানে ১৪ কেজি গাজাসহ মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার। সাড়ে ৬০০ কোটি টাকার ডেমু ট্রেন নিলামে বিক্রির পরিকল্পনা  পরিবর্তন আনা হচ্ছে পুলিশ, র‌্যাব ও আনসার বাহিনীর পোশাকে। চট্টগ্রাম বিভাগের বিভাগীয় ক্রীড়া সংস্থার নতুন অ্যাডহক কমিটির অনুমোদন পটিয়ায় জিয়াউর রহমানের জন্মবার্ষিকীতে দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভা জিয়া ক্রিকেট টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন রংপুর বিভাগ। সোমবার ৪ দিনের সফরে  সুইজারল্যান্ডে যাচ্ছেন  প্রধান উপদেষ্টা।
মঙ্গলবার, ২১ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৩২ অপরাহ্ন

সাতক্ষীরায় জালিয়াতি করে ১৮ বছর শিক্ষকতায় বহাল 

রিপোটারের নাম / ১৬ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ২০ জানুয়ারি, ২০২৫

 

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি : সাতক্ষীরা সদরের বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল বিভাগীয় প্রধান মোঃ আহসানউল্লাহ’র বিরুদ্ধে জালিয়াতির মাধ্যমে ১৮ বছর শিক্ষকতা করার অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের প্রভাব খাটিয়ে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে শিক্ষকতা পেশায় বহাল থেকে ১৮ বছরে তিনি অবৈধভাবে প্রায় ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ২৭২ টাকা উত্তোলন করেন। এ বিষয়ে ইতোপূর্বে সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেন ওই প্রতিষ্টানের ১৮ জন শিক্ষক -কর্মচারী। তবে অভিযোগটি কোন প্রকার তদন্ত ছাড়া ধামাচাপা দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

 

বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ভোকেশনাল বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে থাকা মোঃ আহসানউল্লাহ্’র জালিয়াতির তথ্য প্রমাণ বেরিয়ে এসেছে গণমাধ্যমের অনুসন্ধানে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ২০০৩ সালের ৩ জুলাই আহাসানউল্লাহ বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভোকেশনাল শাখায় ট্রেড ইন্সট্রাক্টর হিসাবে যোগদান করেন। যোগদানের পরের বছরে এমপিও ভুক্ত হন এবং যথারিতি বেতন ভাতা উত্তোলন করেন। পরবর্তীতে ২০০৭ সালের ২৫ এপ্রিল বিদ্যালয় থেকে নিজের পদ হতে পদত্যাগ করেন আহসানুল্লাহ্। পদত্যাগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়া যায় সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের রেজুলেশন পত্র থেকে। এরপর তিনি চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-০১ জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে যোগদান করেন। যাহার ব্যক্তিগত আইডি নম্বর ০৯১১০৪১। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরিরত অবস্থায় ২০০৭ সালের মে, জুন, জুলাইয়ের বেতন ভাতা উত্তোলন করেন,যেটার একটি বেতন শিট প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। সেখানে জুনিয়র ইঞ্জিনিয়ার পদে চাকুরীরত অবস্থায় অসদাচরণ, নির্দেশ অমান্য, দায়িত্বে অবহেলার কারণে পল্লী বিদ্যুৎ কর্তৃপক্ষ তাকে ২০০৭ সালের ১৩ আগস্ট চাকরি থেকে বরখাস্ত করেন। চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি থেকে চাকরিচ্যুত হওয়ার পর পুনরায় পূর্বের কর্মস্থল মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয় যোগদানের চেষ্টায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। তবে বিদ্যালয় থেকে পদত্যাগ করে যাওয়ায় পুনঃরায় চাকরিতে সংযুক্ত হওয়াটা অফিসিয়াল নিয়ম বহির্ভূত। তবে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মোঃ আব্দুর রাজ্জাক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতিকে আর্থিক সুবিধা দিয়ে আহসানুল্লাহ কোন প্রকার নিয়োগ যাচাই-বাছাই ছাড়াই পূর্বের পদে বহাল হন। রেজুলেশন সহ অন্যান্য বেশ কিছু কাগজপত্র জালিয়াতি করেন প্রধান শিক্ষক সহ সংশ্লিষ্ট কমিটির দায়িত্বরত ব্যক্তিরা। জালিয়াতির মাধ্যমে পুনঃরায় বেতন ভাতা উত্তোলনসহ পূর্বের পদে বহাল হয় আহসানউল্লাহ্। জাল জালিয়াতির মাধ্যমে চাকরিতে বহাল থেকে গত ১৮ বছরে প্রায় ৩৭ লাখ ৬১ হাজার ২৭২ টাকা উত্তোলন করেছেন। বিধি বর্হিভূতভাবে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক ও ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে সকল সুবিধা ভোগ করে আসছেন তিনি। এ সমস্ত বিষয়ে তথ্য প্রমাণ সহ সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ দেন ওই প্রতিষ্ঠানের ১৮ জন শিক্ষক ও কর্মচারী। তবে মোঃ আহসানউল্লাহ সাতক্ষীরা সদরের রসুলপুর এলাকার আওয়ামী লীগের একজন পদধারী নেতা হওয়ায় দলীয় প্রভাব বিস্তার করে তদন্ত কার্যক্রম বন্ধ করেন বলে অভিযোগ রয়েছে।

 

বল্লী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গণিত বিষয়ের শিক্ষক আব্দুল আলীম জানান, বল্লী স্কুলে চাকরিতে থাকা কালীন নিজে পদত্যাগ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিতে চাকরি শুরু করেন আহসানউল্লাহ। পরবর্তীতে সেখানে দুর্নীতির দায়ে চাকরিচ্যুত হন আহসানউল্লাহ। ফিরে এসে বল্লী স্কুলে পুনঃরায় চাকরিতে প্রবেশের নানা ধরনের চেষ্টা করেন। এক পর্যায়ে তৎকালীন প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক এবং ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি’র মাধ্যমে রেজুলেশনে পদত্যাগপত্রে ওভার রাইটিং করে পদত্যাগপত্রের স্থলে চিকিৎসাপত্র লেখেন তারা। অনৈতিক সুবিধা নিয়ে জাল-জালিয়াতি করে পুনঃরায় তাকে চাকরিতে বহাল করেন। এ বিষয়ে আমরা উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলাম তবে দীর্ঘ একটি বছর অতিবাহিত হলেও তিনি এ বিষয়ে কোনো তদন্ত হয়নি।

 

প্রতিষ্ঠান থেকে সদ্য বিদায়ী অফিস সহকারী মুস্তাফিজুর রহমান জানান, আহসানউল্লাহ্ ২০০৭ সালে এপ্রিল মাসে পদত্যাগ করে চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতে চাকরিতে যান। চার মাস চাকরি করে সেখানকার চাকরি হারিয়ে ভূয়া একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট নিয়ে প্রধান শিক্ষক ও তৎকালীন সভাপতির সহযোগিতায় রেজুলেশনে ওভার রাইটিং করে চাকরিতে বহাল হয়। বিনিময়ে আর্থিক সুবিধা নেন প্রধান শিক্ষক এবং সভাপতি। এ বিষয়ের সমস্ত কাগজপত্র আমাদের সংগ্রহে রয়েছে। আওয়ামী লীগের সময়ে তিনি নিজেকে সরকারদলীয় লোক বলে দাবি করতেন এবং তদন্ত কার্যক্রম সহ এই সংশ্লিষ্ট কথা বললে তাকে ভয়ভীতি প্রদর্শন করতেন।

 

এ সকল অভিযোগের বিষয়ে মোঃ আহসানউল্লাহ বলেন, তিনি কখনো চাঁদপুর পল্লী বিদ্যুতে চাকরিরত ছিলেন না জানিয়ে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।

 

বল্লী মোঃ মুজিবুর রহমান মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের সাবেক প্রধান শিক্ষক আব্দুর রজ্জাক বলেন, রেজুলেশনে কারিগরি বিভাগের শিক্ষক মোঃ আহসানউল্লাহ পদত্যাগপত্রটি আমার হাতের লেখা তবে সেখানে আমার স্বাক্ষর নেই। রেজুলেশনে কিভাবে পদত্যাগপত্রের স্থানে চিকিৎসাপত্র লেখা হয়েছে এই বিষয়টি আমার জানা নেই। হয়তো আমার অনুপস্থিতিতে কেউ কাজটি করেছে।

 

সাতক্ষীরা সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার শোয়াইব আহমাদ জানান, সম্ভবত এটার প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছিলো। ফাইল না দেখে এ বিষয়ে বিস্তারিত তথ্য জানানো যাচ্ছে না।


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ