শিরোনাম
ছাতক ওয়াপদা অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব: ঘুষে চলছে বিদ্যুৎ বাণিজ্য! জাতীয়তাবাদী সড়ক পরিবহন শ্রমিক দলের কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক হলেন আহমদ নুর এরিক চট্টগ্রামে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে দৈনিক সংবাদ সারাবেলার প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপন মহেশপুরে বর্ণাঢ্য আয়োজনের মধ্য দিয়ে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস পালন।  মহেশপুরে প্রত্যন্ত অঞ্চলের নারী ও শিশুদের সাথে মতবিনিময় অনুষ্ঠিত হয়েছে।  ছাতকে দুই গ্রামবাসীর রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ, আহত অন্তত ১৫ লুটপাটে থমথমে পরিবেশ, গ্রেফতার ৬ চট্টগ্রামে সম্পন্ন হলো ‘১ম আন্তঃ যুব রেড ক্রিসেন্ট বিতর্ক চ্যাম্পিয়নশীপ–২০২৫’ চট্টগ্রামের পোর্ট সিটি ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটিতে টেক্সটাইল ক্লাব – পিসিআইইউ আয়োজিত। বোনের হাতে ফোঁটা নিলেন ভারতীয় ওয়েব মুভি “হয়তো তোমারই জন্য” র অভিনেতা ঋজু রায়  চন্দনাইশে সৈয়দ জিয়াউল হক মাইজভাণ্ডারী (ক.)’র বার্ষিক ওরশ শরীফের স্মরণে ২য় ধাপে ফ্রি খৎনা ক্যাম্প অনুষ্ঠিত
মঙ্গলবার, ১১ নভেম্বর ২০২৫, ০৩:১৩ পূর্বাহ্ন

ছাতক ওয়াপদা অফিসে অনিয়ম-দুর্নীতির মহোৎসব: ঘুষে চলছে বিদ্যুৎ বাণিজ্য!

ছাতক প্রতিনিধি / ১০ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : সোমবার, ১০ নভেম্বর, ২০২৫

ছাতক(সুনামগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

সুনামগঞ্জের ছাতক উপজেলার নির্বাহী প্রকৌশলী, বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (বিউবো) ছাতক অফিস বর্তমানে অনিয়ম, দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের এমন এক অন্ধকার চক্রে জড়িয়ে পড়েছে, যা সরকারি প্রতিষ্ঠানের ভাবমূর্তি ধ্বংস করে দিয়েছে। অফিসটি এখন যেন “ঘুষ ও দুর্নীতির দুর্গ” এমনটাই অভিযোগ অসংখ্য ভুক্তভোগী গ্রাহক ও স্থানীয়দের।

প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ যোগদানের পর থেকেই তাঁর নেতৃত্বে গড়ে উঠেছে একটি প্রভাবশালী ঠিকাদার সিন্ডিকেট, যারা খোলামেলাভাবে ঘুষ বাণিজ্য ও ভয়ভীতি প্রদর্শনের মাধ্যমে পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে জিম্মি করে রেখেছে।

বিদ্যুৎ লাইন নির্মাণ, মেরামত, নতুন সংযোগ, বিল সংশোধন সব ক্ষেত্রেই গ্রাহকদের দিতে হয় মোটা অঙ্কের ঘুষ। ঘুষ না দিলে হয়রানির শিকার হতে হয়, দপ্তরে দপ্তরে ঘুরতে হয় মাসের পর মাস।

অভিযোগ রয়েছে, মিটার রিডিং না দেখেই অতিরিক্ত বিদ্যুৎ বিল তৈরি করে দেওয়া হচ্ছে। অভিযোগের সুরাহা তো দূরের কথা, বরং নিরপরাধ গ্রাহকদের নামে বকেয়া বিলের মামলা দেওয়া হচ্ছে যাদের অনেকেই আসল গ্রাহকই নন।

ইসলামপুর ইউনিয়নের গণেশপুরের বাসিন্দা জাহিদ হাসান মোহাম্মদ রুহেলকে ২৬ অক্টোবর আকস্মিকভাবে পুলিশ ধরে নিয়ে যায় বকেয়া বিলের মামলায়। অথচ তাঁর নামে কোনো বকেয়া বিল ছিল না। পরে জানা যায়, প্রকৃত বকেয়া বিলধারী হলেন অন্য একজন নাজমুল হুদা (মিটার নং ৪৪২৭৩০৭০), যার ২ লাখ ১৭ হাজার টাকার পাওনা ছিল। অভিযোগ উঠেছে, ওয়াপদা কর্তৃপক্ষের গাফিলতি ও অসৎ উদ্দেশ্যে জাহিদ হাসান রুহেল কে হয়রানি করা হয়েছে। ঘটনা প্রকাশ পাওয়ার পর রুহেলকে আপোষের প্রস্তাব দেওয়া হয়, কিন্তু তিনি আইনি প্রতিকার ও দায়ীদের শাস্তির জন্য লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন।

গত ৭ নভেম্বর মন্ডলীভোগ এলাকায় মিটার চেক’ করার নামে ওয়াপদার কিছু বেসরকারি কর্মচারী স্থানীয়দের সঙ্গে অসদাচরণ ও ভাঙচুর চালায়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী আবুল খয়ের থানায় অভিযোগ দিলে, নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বিষয়টি ‘রফাদফা’র উদ্যোগ নেন। কিন্তু সাংবাদিকরা বিষয়টি জানতে অফিসে গেলে, প্রকৌশলী তাদের ৪০ মিনিট দরজার বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখে বৈঠক করেন এবং পরে অসৌজন্যমূলক আচরণ করেন। এমনকি পুলিশ ডেকে সাংবাদিকদের ভয় দেখানোর চেষ্টা করেন।
পরে উল্টো তাদের বিরুদ্ধেই মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হয় যার নৈপথ্যে ছিল সিন্ডিকেটের সক্রিয় সদস্যরা। দীর্ঘদিন যাবত এসব কর্মকাণ্ডে জরিত রয়েছে স্থানীয় এক সাংবাদিক। বিদ্যুৎ অফিস সহ উপজেলার সকল দপ্তরেই রয়েছে তার মাসোহারা এবং আদিত্য।

তদন্তে জানা গেছে, ‘লাইন মেরামত’ ও নতুন সংযোগ’ প্রকল্পের বিল ওঠানোর সুযোগে প্রকৌশলী মজিদ ও তাঁর ঘনিষ্ঠ ঠিকাদাররা লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে।
ইতোমধ্যে উপজেলার হাসনাবাদ-ইলামেরগাঁও এলাকায় নতুন বিদ্যুৎ লাইন স্থাপনের নামে ২ লাখ টাকার প্রকল্পে আগেই ১ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার ভিডিও ফুটেজ পাওয়া গেছে। কাজের অনুমোদন থাকা সত্ত্বেও বাকি ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা না দেওয়ায় প্রকল্পটি ইচ্ছাকৃতভাবে স্থগিত রাখা হয়েছে।

এর আগে লাইন মেরামতের নামে ঘুষ বাণিজ্যে জড়িত দুজনকে হাতে-নাতে সেনাবাহিনী আটক করেছিল। কিন্তু স্থানীয় প্রভাবশালীদের তদবিরে চার্জশিটে সাক্ষীদের নাম বদলে নিরপরাধদের জড়ানো হয়, ফলে সিন্ডিকেট আরও শক্তিশালী হয়ে ওঠে।

সম্প্রতি দক্ষিণ বাগবাড়ি এলাকায় ট্রান্সমিটার পরিবর্তনের জন্য ৩ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে সিন্ডিকেট সদস্যদের বিরুদ্ধে। এছাড়া কার্ড মিটার অনিয়ম, বকেয়া বিলের জালিয়াতি, লাইনের অদক্ষ মেরামতের কারণে মানুষ ও গবাদি পশুর মৃত্যুর ঘটনাও ঘটেছে।

যে কেউ সিন্ডিকেটের অন্যায়ের প্রতিবাদ করলে, তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা বা থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়। সাংবাদিকরাও এর থেকে রেহাই পান নি।
সোশ্যাল মিডিয়ায় এখন প্রায় প্রতিদিনই ছাতক ওয়াপদার দুর্নীতি, হয়রানি ও মামলা বানিজ্যের নানান ভিডিও ও পোস্ট ভাইরাল হচ্ছে।

অভিযোগ রয়েছে, ঠিক এ ধরনের অনিয়মের দায়ে সিন্ডিকেটের অন্যতম পৃষ্ঠপোষক ও সাবেক নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মালেককে পূর্বে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছিল। এখন সেই একই পথে হাঁটছেন তাঁর উত্তরসূরি আব্দুল মজিদ, যিনি এই দপ্তরকে আবারও দুর্নীতি ও ঘুষ বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত করেছেন। ইতিপূর্বে তাকেও বান্দরবানে শাস্তি মুলক বদলী করা হয়েছে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা বলছেন, ওয়াপদা অফিস আজ সিন্ডিকেটের কব্জায়। সাধারণ গ্রাহকরা ন্যায্য পাওনা চাইলেও তাদের হয়রানি করা হয়। এখনই কঠোর ব্যবস্থা না নিলে এই চক্র পুরো বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেবে। এছাড়া তথ্য সংগ্রহকারী গণমাধ্যম কর্মীদের সাথে অসাধু আচরণ ও তাদের নামে একের পর মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করা হচ্ছে।

তদন্তসাপেক্ষে অভিযুক্ত প্রকৌশলী ও ঠিকাদারদের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া না হলে এই ‘দুর্নীতির দুর্গ’ ভেঙে পড়বে না, বরং আরও গভীরে প্রোথিত হবে ঘুষের শিকড়।

এ বিষয়ে বক্তব্য নিতে গেলে ছাতক বিদ্যুৎ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের বির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুল মজিদ বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়ে সাংবাদিকদের সাথে অসাধু আচরণ করেন।

সিলেট বিভাগের প্রধান প্রকৌশলী মোঃ আব্দুল কাদির বলেন সাংবাদিকদের সাথে সাথে এমন আচড়ন করে তাকলে তা ক্ষতিয়ে দেখা হবে।


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ