এইচটি বাংলা অর্থনীতি ডেস্ক : বাংলাদেশের ব্যাংক খাতে অনিয়ম ও অব্যবস্থাপনার কারণে খেলাপি ঋণের বোঝা ক্রমশ বেড়ে চলেছে। একসময়ের স্বনামধন্য ব্যাংকগুলো এখন খেলাপি ঋণের জালে আটকে আছে, যা ভবিষ্যতে আরও বাড়ার শঙ্কা রয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে উঠে এসেছে, বর্তমানে ব্যাংক খাতে খেলাপি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ২ লাখ ৮৪ হাজার ৯৭৭ কোটি টাকা, যা মোট বিতরণকৃত ঋণের প্রায় ১৭ শতাংশ।
বাংলাদেশ ব্যাংকের কড়া নির্দেশনা সত্ত্বেও, বেসরকারি খাতের এবি ব্যাংক আবারও তা লঙ্ঘন করে ঋণপত্র (এলসি) খুলেছে। এ কারণে কেন্দ্রীয় ব্যাংক এবি ব্যাংককে জরিমানা করেছে। এর আগেও ব্যাংকটি প্যাসিফিক মোটরসের খেলাপি ঋণের তথ্য গোপন রেখে বিশেষ সুবিধা দেওয়ার অভিযোগে জরিমানার মুখে পড়েছিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিষেধাজ্ঞা অনুযায়ী, এবি ব্যাংকের গুলশান শাখা থেকে কৃষি ও সিএসএমই ঋণ ছাড়া নতুন ঋণ প্রদান বন্ধ থাকার কথা। এছাড়া ১২টি গ্রাহক প্রতিষ্ঠানকে নতুন ঋণ না দেওয়ার নির্দেশ ছিল। যদিও গ্লোবাল করপোরেশনসের ক্ষেত্রে এই নিষেধাজ্ঞা শিথিল করা হয়, বাকিদের ক্ষেত্রে তা বলবৎ রয়েছে।
কিন্তু কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তদন্তে উঠে এসেছে, ২০২৩ সালের মাঝামাঝি থেকে ২০২৪ সালের শেষ পর্যন্ত এস. এস. স্টিল লি., সালেহ স্টিল ইন্ডাস্ট্রিজ লি. এবং ফু-ওয়াং সিরামিক ইন্ডাস্ট্রিজ লি.-কে ১,৫২২.২৪ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে ৮৭৯.৭৪ কোটি টাকা ফান্ডেড এবং ৬৪২.৫০ কোটি টাকা নন-ফান্ডেড ঋণ। এ ঋণের একটি বড় অংশ যথাযথভাবে ব্যবহার না করে নগদ উত্তোলন এবং বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে, যা অর্থের অপব্যবহারের প্রমাণ বহন করে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গোপন প্রতিবেদনে জানা গেছে, ২০২৩ সালের ২৪ ডিসেম্বরের পর নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে এস. এস. স্টিল লি.-কে এলসি সুবিধা দেওয়া হয়, যা ব্যাংকের নীতিমালার পরিপন্থি। এছাড়া ৩৫০ কোটি টাকার (রিভলভিং) ঋণ সুবিধার আওতায় নতুন ঋণ অনুমোদন করা হয়, যা নিষেধাজ্ঞা ভঙ্গের শামিল।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনা লঙ্ঘনের দায়ে এবি ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ, ফরেন ট্রেড ইনচার্জ ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা দায়ী বলে প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়া গেছে। এ ঘটনায় ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী এবি ব্যাংককে ২ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
এবি ব্যাংকের ভারপ্রাপ্ত ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মিজানুর রহমান বলেন, _’এস. এস. স্টিল সংক্রান্ত জরিমানার বিষয়ে আমরা জানি, তবে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা পুরনো ফাইল পর্যালোচনা না করে বলা সম্ভব নয়। আমরা বিষয়টি পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকে আবেদন করেছি।’
এবি ব্যাংকের মোট ঋণের পরিমাণ ৩২ হাজার ৩৩৮ কোটি টাকা, যার মধ্যে ১০ হাজার ১১৫ কোটি টাকা অর্থাৎ ৩১ শতাংশই খেলাপি ঋণ। যদিও বিশেষ সুবিধার আওতায় থাকায় প্রভিশন ঘাটতি নেই, তবে এই সুবিধা বাতিল হলে ব্যাংকটি বড় আর্থিক চাপে পড়বে।