এইচটি বাংলা ডেস্ক : জাল সনদ ব্যবহার করে দীর্ঘ ১৩ বছর ধরে বহাল তবিয়তে চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষিকার বিরুদ্ধে, শুধু তাই নয় জাল পিএইচডি সার্টিফিকেট ব্যবহার করে হয়েছিলেন বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগের চেয়ারম্যান। অভিযোগ টি উঠেছে খোদ রাজধানীর ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ (ইইউবি) এর ব্যবসায় প্রশাসন বিভাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান ফারজানা আলমের বিরুদ্ধে।
অভিযোগের সত্যতা নিশ্চিত করতে ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ১৬ জানুয়ারি ২০২৫ এ একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। যেখানে ইইউবির প্রক্টর মেজর (অব.) আমিনুর রহমান কে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়, বাকি দুইজন হলেন প্লানিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট শাখার ডিরেক্টর, নাকিব আল কাউসার এবং অ্যাডমিশন শাখার ডিরেক্টর, ড. মো. সফিউল্লাহ মীর।
তদন্ত রিপোর্টে বলা হয়, ফারজানা আলম এমবিএ ডিগ্রি ব্যবহার করে ইইউবিতে বিজনেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন বিভাগে অ্যাসিস্ট্যান্ট প্রফেসর পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন। পরবর্তীতে যুক্তরাজ্যের আইএসএলইএস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির পিএইচডি সার্টিফিকেট ব্যবহার করে পদোন্নতি পেয়ে হয়ে যান একই বিভাগের চেয়ারম্যান। তার এই দুটি সার্টিফিকেটই জাল। তার এমবিএ সার্টিফিকেট অনুযায়ী তিনি রয়েল ইউনিভার্সিটি অফ বাংলাদেশ থেকে ২০১২ সালে এমবিএ ডিগ্রি সম্পন্ন করেছেন। কিন্তু রয়েল ইউনিভার্সিটিতে তার সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন করে দেখা যায় তিনি কখনো ঐ ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টই ছিলেন না।
রয়েল ইউনিভার্সিটির ডেপুটি রেজিস্ট্রার মো. মশিউর রহমান ফারজানা আলমের প্রদর্শিত সার্টিফিকেটি জাল বলে চিহ্নিত করে বলেন, ফারজানা আলম কখনোই আমাদের শিক্ষার্থী ছিলো না। আমাদের প্রতিষ্ঠান কর্তৃক এই সার্টিফিকেটটি জারি করা হয়নি।
রয়েল ইউনিভার্সিটির হিসাব শাখার মোজাম্মেল হক প্রতিবেদককে বলেন, আমাদের সাবেক আইটি অফিসার সহ বেশ কয়েকজন সার্টিফিকেট জালিয়াতি সাথে জড়িত ছিল, এবং তারা এখনো আমাদের ওয়েবসাইট এবং ই-মেইলের এক্সেস হ্যাকিংয়ের করে জাল সার্টিফিকেট ভেরিফিকেশন আসা ই-মেইল গুলোর রিপ্লাই সঠিক বলছিলো, ইতিমধ্যে আমরা সেটি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হয়েছি।
এদিকে, যুক্তরাজ্যে পড়াশোনা করতে যাওয়া বিদেশি শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করে পরিচালিত একটি আন্তর্জাতিক শিক্ষা কেলেঙ্কারির বিষয়টি বিবিসি লন্ডনের একটি তদন্তে উঠে আসে ফারজানা আলমের পিএইচডি সম্পূর্ণ করা যুক্তরাজ্যের সেই “আইএসএলইএস ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির” নাম।
২০০৮ সালের বিবিসি ইউকে এর সেই প্রতিবেদনে বলা হয় যে, যুক্তরাজ্য সরকারের অনুমোদন নেই ঔ বিশ্ববিদ্যালয়ের, এদের নিজস্ব কোন ক্যাম্পাসও নেই। এদের সকল কার্যক্রম অনলাইনে এবং বিভিন্ন প্রোগ্রাম করা হয় অনলাইনে, মাঝে-মধ্যে বিভিন্ন হাউস ভাড়া করে সেখানে গোপন মিটিং করা হয়।
বিবিসি ইউকে অনুসন্ধানে আরো উঠে আসে, এই প্রতিষ্ঠানটি অনুমোদনহীন, তবুও শত শত শিক্ষার্থীকে ব্রিটেনে প্রবেশের জন্য এবং লন্ডনের বেসরকারি কলেজগুলিতে পরীক্ষা দেওয়ার জন্য শিক্ষাগত ভিসা দেওয়া হয়েছে।
বিশ্বব্যাপী ৫,০০০ শিক্ষার্থী এবং যুক্তরাজ্যে হাজার হাজার স্নাতক সম্পন্ন এই বিশ্ববিদ্যালয় গোপনে অধ্যায়নরত। তারা বিস্তৃত কিন্তু অত্যন্ত কৌশলে ওয়েবসাইটের মাধ্যমে একটি বৈধ শিক্ষার ভ্রান্ত ধারণা বজায় রেখেছে।
পরবর্তীতে সমস্ত বিষয় অনুসন্ধান ও পর্যালোচনা করে ইইউবির ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি কমিটির সিদ্ধান্তক্রমে ইউরোপিয়ান ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ ঢাকা চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফারজানা আলমের বিরুদ্ধে একটি সার্টিফিকেট জালিয়াতির মামলা দায়ের করেছেন। মামলাটি এখন সিআইডির হেডকোয়ার্টার তদন্তাধীন অবস্থায় রয়েছে।
এ বিষয়ে অভিযুক্ত ফারজানা আলমের কাছে জানতে চাইলে প্রতিবেদক কে বলেন, আমার মাস্টার্সের সার্টিফিকেট সঠিক কি না সেটা নিশ্চিত না হয়েই কেনো ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষ আমাকে চাকরি দিয়েছিলেন? এখন কেনো এগুলো নিয়ে কথা বলছেন তারা? তার পিএইচডি সার্টিফিকেট জাল এর বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন সরি আমি এ বিষয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক না।