এইচটি বাংলা আন্তর্জাতিক ডেস্ক : ফিলিস্তিনকে অবিলম্বে স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিতে যুক্তরাজ্যের ক্ষমতাসীন লেবার পার্টির ৫৯ জন এমপি পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে আহ্বান জানিয়ে একটি খোলা চিঠি দিয়েছেন। তাঁরা গাজায় ইসরায়েলি পরিকল্পনাকে “জাতিগত নিধন” আখ্যা দিয়ে বলেন, পরিস্থিতি এখন মানবতাবিরোধী অপরাধের পর্যায়ে পৌঁছেছে। খবর আল জাজিরার।
বৃহস্পতিবার (১০ জুলাই) পাঠানো এবং শনিবার (১২ জুলাই) প্রকাশিত চিঠিতে ব্রিটিশ এমপিরা ইসরায়েলি প্রতিরক্ষামন্ত্রী ইসরায়েল কাটজের পরিকল্পনার কঠোর সমালোচনা করেন, যেখানে গাজার ২১ লাখ ফিলিস্তিনিকে রাফাহর ধ্বংসস্তূপে নির্মিত তথাকথিত “মানবিক শহরে” জোরপূর্বক স্থানান্তরের কথা বলা হয়েছে। চিঠিতে এই পরিকল্পনাকে “নতুন কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের” সঙ্গে তুলনা করেন তারা।
চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, বিশিষ্ট ইসরায়েলি মানবাধিকার আইনজীবী মাইকেল স্ফার্ড বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের গাজার দক্ষিণ প্রান্তে ঠেলে দিয়ে “বহিষ্কারের প্রস্তুতি” নেওয়া হচ্ছে। এমপিরা বলেন, “এই পরিকল্পনা থামাতে হবে, এখনই।”
এমপিরা ব্রিটিশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানান, যেন তারা ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর মতোই ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে দুই-রাষ্ট্র সমাধানের প্রতি সমর্থন জানায়। ম্যাক্রোঁ সম্প্রতি যুক্তরাজ্য সফরে এসে ব্রিটিশ পার্লামেন্টে বলেন, “ফিলিস্তিন রাষ্ট্রকে স্বীকৃতি দেওয়া এখন জরুরি এবং এটিই শান্তির একমাত্র পথ।”
ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী ল্যামি মঙ্গলবার পার্লামেন্টের বৈদেশিক সম্পর্ক কমিটিতে জিএইচএফ এর বিতরণ কেন্দ্রগুলোর সমালোচনা করেন। এই বিতরণ কেন্দ্রগুলো মূলত গাজার দক্ষিণে নির্মিত হয়েছে এবং জাতিসংঘের ত্রাণ ব্যবস্থাকে পাশ কাটিয়ে চালু রয়েছে। তিনি বলেন, “এই কেন্দ্রগুলো কার্যকর নয়। বহু মানুষ অনাহারে দিন কাটাচ্ছেন, অনেকে প্রাণ হারিয়েছেন।”
জাতিসংঘের তথ্য অনুসারে, মে মাসের শেষ থেকে চালু হওয়া এই বিতরণ কেন্দ্রগুলোর আশেপাশে এখন পর্যন্ত ৮১৯ জন ফিলিস্তিনি নিহত হয়েছেন — যার মধ্যে ৬৩৪ জনই জিএইচএফ কেন্দ্রের কাছে মারা গেছেন। শুধুমাত্র শনিবার রাফাহতে এমন একটি কেন্দ্রের কাছে আরও ৩৪ জন নিহত হন।
চিঠিতে এমপিরা বলেন, “ফিলিস্তিনকে স্বীকৃতি না দিলে বিশ্বে এমন বার্তা যায় যে, বর্তমান অবস্থা চলতেই থাকবে — যার মাধ্যমে ফিলিস্তিনি ভূখণ্ড ধীরে ধীরে মুছে যাচ্ছে ও দখলে যাচ্ছে।”
তারা লেবার সরকারের অস্ত্র রপ্তানি লাইসেন্স বাতিল ও উগ্র ইসরায়েলি মন্ত্রী বেন-গভির এবং স্মোত্রিচের ওপর নিষেধাজ্ঞার প্রশংসা করলেও বলেন, গাজার “মরণাপন্ন পরিস্থিতি” আরও জোরালো পদক্ষেপ দাবি করে।
এই চিঠিটি লেবার পার্টির সহযোগী সংগঠন “লেবার ফ্রেন্ডস অব প্যালেস্টাইন অ্যান্ড দ্য মিডল ইস্ট” আয়োজিত, যার সহ-সভাপতি এমপি সারাহ ওয়েন ও অ্যান্ড্রু পেইকস।
এই সপ্তাহে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, দুই-রাষ্ট্র সমাধান পুনরুজ্জীবনের লক্ষ্যে একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন জুলাই ২৮-২৯ তারিখে স্থগিত করে নতুন করে আয়োজিত হতে যাচ্ছে। এর আগে এটি জুনে হওয়ার কথা ছিল, কিন্তু ইরান-ইসরায়েল ১২ দিনের যুদ্ধের কারণে তা পিছিয়ে যায়।