শিরোনাম
সাংবাদিকদের কাছে আমার কাজের যৌক্তিক সমালোচনা আশা করি: চসিক মেয়র ডা: শাহাদাত হোসেন টেস্ট ক্রিকেট থেকে বিদায় নিলেন ইমরুল । উন্নয়ন কর্মী ইয়াকুবের নদী দখল করে পিলার নির্মান,প্রতিবাদে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত তালায় ৩ দিন ব্যাপি কৃষি মেলা-২০২৪ এর উদ্বোধন লালমনিরহাটের পাটগ্রামে ট্রেনে কাটা পড়ে নিহত -৪ বাংলাদেশের সংকটে বারবার কান্ডারীর ভূমিকায় জিয়া পরিবার : মীর হেলাল গাজীপুরা পূর্বপাড়া বাইগারটেক  সমাজ কল্যাণ পরিষদের নতুন কমিটি গঠিত। পাটগ্রামে আওয়ামী লীগ দুঃশাসনে চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তারের দাবিতে গণ মিছিল  সাধক আমিন ভাণ্ডারীর হত্যাকারীদের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে তালা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলন তালায় বিআরডিবির মাসিক যৌথসভা ও ই-প্রশিক্ষণের নামে অর্থ আত্মসাৎতের অভিযোগ
শুক্রবার, ১৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪৯ পূর্বাহ্ন

দুই বাংলার মিলনমেলা, অশ্রুজলে ফিরে গেলেন দুই পারের স্বজনরা

রিপোটারের নাম / ২১৬ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : শনিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০২৩

আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি:

ঠাকুরগাঁওয়ের রাণীশংকৈল সীমান্তের জগদল ৩৭৩ ও ধর্মগড় ৩৭৪ হরিপুরের ৩৬৮ থেকে ৩৭১ পিলারের কাছে নাগরভিটা নদীর তীরে বসে দু’বাংলার লাখো মানুষের মিলন মেলা।

এজন্য ঠাকুরগাঁও, পঞ্চগড়, দিনাজপুর, কাহারোল, রংপুর,বগুড়া এবং ভারতের কোচবিহার, আসাম, দার্জিলিং, শিলিগুড়ি, জলপাইগুড়ি, কলকাতাসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বাইসাইকেল, অটোরিকশা, মাইক্রো, মিনিবাসযোগে মানুষ সীমান্তে হাজির হয়। এরপর চলে প্রতীক্ষার প্রহর।

স্থানীয়রা জানান, ভোর থেকে দুই দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষেরা এসে জড়ো হন সীমান্তে। দীর্ঘদিন বিচ্ছিন্ন থাকা মানুষজন একে অপরের সঙ্গে মিলিত হবার এ সুযোগ হাতছাড়া করতে চায়নি বলে ছুটে আসে স্বজনদের একনজর দেখার টানে।

প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম দিনে এ মিলন মেলা হয়ে থাকে।

এই দিনটির জন্য সারা বছর দু’বাংলার মানুষ অপেক্ষা করে । মোবাইল ফোনের মাধ্যমে আগে থেকেই জানিয়ে দেয় স্বজনরা। কে কোথায় দেখা করবে। এই মিলন মেলায় দু’বাংলার লাখো মানুষ মিলিত হয়ে সেরে নেন স্বজনদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ ও কুশল বিনিময়ের পালা।

রাণীশংকৈল উপজেলা চেয়ারম্যান শাহরিয়ার আজম মুন্না বলেন , ১৯৭৪ সালে পর উপজেলার সীমান্ত এলাকা পাক-ভারত বিভক্তির আগে ভারতের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার অধীনে ছিল। এ কারণে দেশ বিভাগের পর আত্মীয়স্বজনেরা দু’দেশে ছড়িয়ে পড়ে। তাই সারা বছর কেউ কারো সাথে দেখা করতে না পারায় এ দিনটির জন্য অপেক্ষা করে।

বাংলাদেশ ও ভারতীয় বাসিন্দাদের মধ্যে কিছু সময় কথা বলার সুযোগ করে দেয় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) সদস্যরা। দুই দেশে বসবাসরত আত্মীয়-স্বজনদের একনজর দেখার জন্য হাজারো মানুষ উপস্থিত হয়। নাড়ির টানে বা মায়ার বন্ধনে দুই বাংলার বিভিন্ন জেলা থেকে ছুটে আসে লাখো মানুষ।

শনিবার (১৫ এপ্রিল) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, বাংলাদেশ ও ভারত সীমান্তে আত্মীয়-স্বজনদের ভিড়, দীর্ঘদিন দ‍ূরে থাকা, দেখা না হওয়ায় অনেকেই কান্নায় ভেঙে পড়েন। দু’পাড়ের স্বজনরা সকালে হাসিমুখে দেখা করতে এসে বিকালে বিদায় বেলায় দেখা না করে ফিরেছেন অশ্রুস্বজল চোখে কাঁন্নায়। চোখের পানিতে ভিজে গেল কাঁটাতারের এপার ওপার।

রাণীশংকৈল উপজেলার স্হানীয়রা জানান,
রমজান মাস হওয়াই দুই বাংলার সীমান্তে লাখো মানুষের মিলনমেলা করা সম্ভব হয়নি। কাঁটাতারের বেড়ার ফাঁকে কথা বলা আর দেখা না করার আক্ষেপ অধরা রয়ে গেল একবছর ধরে অপেক্ষারত ওপারে থাকা তাদের আত্মীয়স্বজনদের সাথে। এবার সীমান্তের কাঁটাতারের কাছে কোন মানুষজনকে ভীড় জমাতে দেয়নি ভারতীয় সীমান্ত রক্ষীবাহিনী ও বর্ডার গার্ড বাংলাদেশের (বিজিবি) ।

রাণীশংকৈল উপজেলা প্রশাসনের সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর বৈশাখের প্রথম দিনে কাঁটাতারের কাছে দুই সীমান্তে লাখো মানুষের সমাগমে ঐতিহ্যবাহী বাংলাদেশ-ভারত মিলনমেলা হয়ে থাকে । এবার রমজান মাসে বৈশাখ হওয়াই মিলনমেলা’র আয়োজন করা হয়নি। কাটাতারের বেড়ার কাছে যাতে কেউ না ভীড়ে এবিষয়ে সতর্ক করে মাইকিং করা হয়। এতে কাঁটাতারের ওপারে থাকা আত্মীয়স্বজনরা মিলিত হতে পারনেনি।

দিনাজপুরের কাহারোল থেকে আসা শ্রী সুদর্শন বলেন, ভারতে আমার ভাগ্নি থাকেন। অনেক খোঁজাখুজির পর নিজের আত্মীয়-স্বজনদের সঙ্গে দেখা হওয়ার পর একটু বুকে জড়িয়ে ধরার ইচ্ছা পোষণ করলেও কাঁটাতারের বেড়ার কারণে সে ইচ্ছা আর পূরণ হয় না। তাদের সঙ্গে দুই বছর পর দেখা করতে এসেছে। এবার দেখা করতে দেয়া হয়নি।

নীলফামারীর জলঢাকা থেকে ভারতে বসবাস করা ছেলেকে দেখতে এসেছিলেন বৃদ্ধা মধুবালা। তিনি কেঁদে কেঁদে জানালেন, টাকার অভাবে ভারতে যেতে পারি না, তাই খবর পেয়ে এলাম ছেলেকে দেখতে; না দেখেই ফিরে যাচ্ছি। প্রতি বছর যেন আমাদের মতো অভাবী মানুষদের জন্য সীমান্তে মিলনমেলার আয়োজন করা হয়।

পঞ্চগড় থেকে আসা বাকলী রাণী (৫২), চন্দ চাঁদ রায় (৬১) আমল (৫০) সহ বিভিন্ন এলাকার অনেকে বলেন, সকাল থেকে আমরা আত্মীয়স্বজনদের সাথে দেখা করার জন্য অপেক্ষায় রয়েছি। দুপুর গড়িয়ে বেলা শেষের দিকে তারপরেও দেথা করতে পারছিনা। আত্মীয়রা ওপারে অপেক্ষায় রয়েছে কাঁটাতারের কাছে আসতে পারছেনা। আগামী বছর দেখা করার অপেক্ষায় রইলাম ।

রাণীশংকৈল জগদল ও ধর্মগড় ক্যাম্পে কর্মরত সীমান্ত বাহিনীরা জানান, এবার মিলনমেলা বন্ধ করে দিয়েছে ভারতীয় কতৃপক্ষ। কাঁটাতারের কাছে কোন বাংলাদেশীরা যেন না যায় সে বিষয়ে আমাদের অনুরোধ করেছেন তারা।
এছাড়াও উপজেলাজুড়ে নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কাউকেই সীমান্তের কাটাতার বেড়ার কাছে না আসার জন্য সতর্ক করে মাইকিং করেন।

 


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ