এফ আই রানা , লালমনিরহাট জেলা প্রতিনিধি : লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) স্বাক্ষর জাল করে সরকারি অর্থ উত্তোলন করে আত্মসাত করার অভিযোগ উঠেছে সাবেক উপজেলা ভূমি অফিসের নাজির কাম-ক্যাশিয়ার আল মামুনের বিরুদ্ধে। তিনি বদলী হওয়ার কিছুদিন পর আর্থিক কেলেঙ্কারীর এ ঘটনা ফাঁস হওয়ায় ব্যাপক আলোচনার সৃষ্টি হয়েছে। ইতিমধ্যে ঘটনা ধামাচাপা দিতে নাজির মামুন উঠেপড়ে লেগেছে।
জানা গেছে, গত ২০২৪ সালের ২৭ ফেব্রæয়ারি পাটগ্রাম উপজেলা ভ‚মি অফিসে নাজির কাম-ক্যাশিয়ার হিসেবে যোগদেন আল মামুন। ওই সময় পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন নুরুল ইসলাম ও জিল্লুর রহমান। ইউএনওদ্বয় একই সময়ে সহকারী কমিশনার (ভূমি) হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ওই সময়ে ইউএনওদের জ্ঞাতসারে সর্বাধিক অনিয়ম হয় এ ভূমি অফিসে। যোগসাজসে নাজির মামুন লাখ লাখ টাকার ভুয়া ব্যয়ের নথি তৈরি করে এবং ইউএনও’র স্বাক্ষর নিয়ে সরকারি কোষাগার থেকে টাকা তুলে ভাগবাটোয়ারা করে নিতেন। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ইউএনওদের যথাযথ অনুমোদন ও যাচাই ছাড়া এ অর্থ উত্তোলন করা সম্ভব নয়।
মামুনের বিরুদ্ধে আর্থিক নানা কেলেঙ্কারি জনমুখে প্রচারিত হওয়ায় গত ১৩ মে রংপুর বিভাগীয় কমিশনার এক আদেশে মামুনকে কুড়িগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে বদলী করেন। কিন্তু তিনি (মামুন) ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের প্রভাব দেখিয়ে বদলীকৃত কার্যালয়ে যোগদান না করে আরো তিনমাস পাটগ্রামে স্বপদে থেকে যান। এই সময়ের মধ্যে পাটগ্রামে নতুন ইউএনও হিসেবে যোগদেন উত্তম কুমার দাশ। তিনিও পূর্বের ইউএনওদের মত এ্যাসিল্যান্ড হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে থাকেন। মামুন এ সুযোগের সৎব্যবহার করে নতুন ইউএনও’র নিকট একটার পর একটা ব্যয়ের বিল ফাইলে স্বাক্ষর নিয়ে আখের গোছাতে থাকেন। মামুনের এসব অনিয়ম ও দুর্নীতির কথা প্রকাশ্যে আসায় মামুনকে পাটগ্রাম ভূমি অফিস থেকে ০৩ আগস্ট অবমুক্ত করে দেন ইউএনও। এরপরও মামুন নতুন কর্মস্থলে না গিয়ে তিনদিনের মধ্যে ৯টি ভুয়া বিল তৈরি করেন।
এ তথ্য জানতে সাংবাদিকেরা তাঁর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি (মামুন) নিজের অনিয়ম ঢাকতে স্থানীয় একাধিক সাংবাদিকদের নামে মিথ্যা চাঁদাবাজির কথা ছড়াতে থাকেন। এ ঘটনায় এ মাসের ১০ আগস্ট ভোরের দর্পণ পত্রিকার পাটগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম সজিব পাটগ্রাম থানায় একটি সাধারণ ডায়েরী করেন।
এর আগে গত ০৭ আগস্ট সোনালী ব্যাংক পাটগ্রাম শাখায় ৯টি ভুয়া বিলের ১ লাখ ৩৩ হাজার ৯৬৫ টাকার বিল উঠাতে যান মামুন। ভুয়া বিল তুলতে ব্যাংকে গেছেন মামুন- এ খবর ছড়িয়ে পড়লে সাংবাদিকেরা ব্যাংকে গেলে বিলের টাকা না নিয়ে সটকে পড়েন তিনি।
পরে ঘটনা ধামাচাপা দিতে অভিযুক্ত নাজির মামুন প্রভাবশালী ব্যক্তিদের দিয়ে চাপ দিতে থাকেন। পাটগ্রাম ভূমি অফিসের একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জানান, মামুন কর্মরত থাকাকালীন ইউএনওদের যোগসাজসে লাখ লাখ টাকার ভুয়া বিল তৈরি ও উত্তোলন করেছেন। গভীর তদন্ত করলে গুরুতর অনিয়ম বেড়িয়ে আসবে।
ভোরের দর্পণ পত্রিকার পাটগ্রাম উপজেলা প্রতিনিধি তৌফিকুল ইসলাম সজিব বলেন, ‘পাটগ্রামে থাকাকালীন আমি মামুনের কাছে ২০২৪-২০২৫ অর্থবছরের ব্যয়ের তথ্য চাইলে, তিনি আমাকে ডেকে নিয়ে মোবাইল ফোন কেড়ে নেন ও হুমকি দেন। এ ঘটনায় আমি পাটগ্রাম থানায় একটি জিডি করেছি।’
এ ব্যাপারে নাজির আল মামুন বলেন, ‘ওগুলো কোনো ঘটনাই আমি জানিনা। ওই রকম কোনো ঘটনা ঘটে নাই। আমি একজন সরকারি কর্মচারী। আমি পাগল নাকি যে একজন সাংবাদিককে লাঞ্চিত করবো। দুর্নীতি বা টাকা উত্তোলনের ব্যাপারে সম্পুর্ণ স্যার (ইউএনও) জানে। আমি এ ব্যাপারে কোনো কমেন্ট করবো না।’
পাটগ্রাম উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উত্তম কুমার দাশ বলেন, ‘আমাদের উপজেলা ভূমি অফিসে কর্মরত ছিল নাজির কাম ক্যাশিয়ার আল মামুন। তাকে অবমুক্ত করেছি। কিন্তু অবমুক্ত হওয়ার পূর্বে সে আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির সাথে সম্পৃক্ত হয়ে পড়ে। প্রাথমিকভাবে এগুলো আমার কাছে প্রমাণিত হয়েছে; এজন্য আমি বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য জেলা প্রশাসকের নিকট পত্র প্রেরণ করেছি। আশা করছি তার বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে।’ স্বাক্ষর জালের ব্যাপারে তিনি বলেন, ‘সমস্ত বিষয় আমি তদন্ত রিপোর্টে উল্লেখ করেছি।’