মোঃ সামছু উদ্দিন লিটন, নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর ‘ভাসানচর’ দ্বীপকে সন্দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত করার যাবতীয় অনৈতিক কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে সরকারকে আইনি নোটিশ দেওয়া হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১৭ এপ্রিল) ‘নিরাপদ নোয়াখালী চাই’ সংগঠন এবং নোয়াখালী বিভাগ ও বিমানবন্দর বাস্তবায়ন সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি সাংবাদিক সাইফুর রহমান রাসেলের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী রাশিদা চৌধুরী নিলু চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর এ লিগ্যাল নোটিশ পাঠান। লিগ্যাল নোটিশের অনুলিপি পাঠানো হয় ডিসি চট্টগ্রাম ও ডিসি নোয়াখালীকে।
মেঘনা নদী ও বঙ্গোপসাগরের মোহনায় জেগে ওঠা ‘ভাসানচর’ দ্বীপকে সন্দ্বীপের অন্তর্ভুক্ত করার যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত চেয়ে নোটিশে বলা হয়, ২০২১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ভাসানচর থানা গঠন করে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে। এতে হাতিয়ার ৫ চর ঈশ্বর ইউনিয়নের ছয়টি মৌজা অন্তর্ভূক্ত করা হয়। সেগুলো হলো-ভাসানচর, শালিকচর, চর বাতায়ন, চর মোহনা, চর কাজলা এবং কেওডার চর। কিন্তু সম্প্রতি একটি গ্রুপ ওই মৌজাটি (ভাসানচর) সন্দ্বীপে অন্তর্ভূক্ত করা চেষ্টা করছে। এটা বেআইনি এবং সরকারের কর্তৃত্বকে চ্যালেঞ্জ করা। এটা অবিলম্বে থামাতে গত ৮ এপ্রিল চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনার বরাবর একটি আবেদন দেন মোহাম্মদ করিমুল হাই। পরবর্তী কার্যক্রম না থামালে নোটিশদাতা সংবিধানের ১০২ অনুচ্ছেদ অনুসারে (রিট) আবেদন করতে বাধ্য হবেন।
সাংবাদিক রাসেল বলেন, ২০০৬-২০০৭ জেগে ওঠা ভাসানচর ভৌগলিক ও প্রশাসনিক ভাবে নোয়াখালীর। এটা মীমাংসিত সত্য। ভাসানচর নোয়াখালীবাসীর আবেগ, অনুভুতি। এটা নিয়ে কোনো ধরনের চক্রান্ত নোয়াখালীবাসী মেনে নিবেনা। এটা আমাদের ছিলো আমাদেরই থাকবে। আজ আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধা রেখে সরকারকে লিগ্যাল নোটিশ দিয়েছি, সদুত্তর না পেলে পরবর্তীতে আমরা রিটে যাবো।
আইনজীবী রাশিদা নিলু বলেন, নোয়াখালীর ভাসানচর দ্বীপটি নিজের মানচিত্রের সঙ্গে যুক্ত করতে মরিয়া হয়ে উঠেন সন্দ্বীপের নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ। কিন্তু এটা খুবই দুঃখজনক বিষয়, কারন ভাসানচর কোনোভাবেই সন্দ্বীপের হতে পারেনা। ভৌগোলিক ভাবেই এটা নোয়াখালীর হাতিয়ার অংশ ছিলো। আমরা আজ আইনের প্রতি শ্রদ্ধা দেখিয়ে প্রাথমিক ভাবে আইনি নোটিশ দিয়েছি, পরবর্তীতে আমরা রিটে যাবো।
বিভিন্ন গণমাধ্যমের প্রতিবেদন অনুসারে, ১৯৯০ সালের দিকে জেগে ওঠা এই দ্বীপের নাম ছিল জালিয়ারচর। ১৯৯৮ সাল থেকে সেখানে সরকারিভাবে বনায়নও শুরু হয়। হাতিয়ার মূল ভূখণ্ড থেকে জালিয়ারচরের দূরত্ব প্রায় ২৫ কিলোমিটার। চরের অবস্থান হাতিয়ার মূল ভূখণ্ডের উত্তর-পূর্ব দিকে। ২০১৭ সালে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের সময় দ্বীপের নাম বদলে রাখা হয় ভাসানচর। এরপর কয়েক দশক দ্বীপের ভূমির পরিমাণ বাড়তে থাকে। ২০১৭ সালের দিকে রোহিঙ্গা পুনর্বাসনের আলোচনার মধ্যেই সেটির নামকরণ হয় ভাসানচর। একই বছর জরিপের মাধ্যমে সেটিকে নোয়াখালীর অংশ হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। তখন চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মানুষের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দেয়। পরবর্তীতে ২০২১ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগ সেখানে ‘ভাসানচর থানা’ গঠনের প্রজ্ঞাপন জারি করে।
চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয় সীমানা জটিলতা নিরসনের লক্ষ্যে একটি কমিটি গঠন করে। ‘চট্টগ্রাম-নোয়াখালী জেলার সীমানা জটিলতা নিরসন কমিটি’ নামের এই কমিটিতে সন্দ্বীপ ও হাতিয়ার নির্বাহী কর্মকর্তার পাশাপাশি পেশাজীবীদেরও অন্তর্ভুক্ত করা হয়। গত ৯ মার্চ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ে কমিটির প্রথম সভা অনুষ্ঠিত হয়েছিল। সভায় সিদ্ধান্তের আলোকে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের রাজস্ব শাখা ভাসানচরকে চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ উপজেলার অন্তর্গত দেখিয়ে প্রতিবেদন জমা দেয়।
এ অবস্থায় গত ৭ এপ্রিল এ নিয়ে নাগরিক কমিটির নেতা আবদুল হান্নান মাসউদ ফেসবুকে ভাসানচরকে হাতিয়ার দাবি করে একটি পোস্ট দেন।
এছাড়া ভাসানচরকে নোয়াখালী জেলার হাতিয়া উপজেলা থেকে বিচ্ছিন্ন করার ‘ষড়যন্ত্রের’ অভিযোগ তুলে দ্বীপ উপজেলা হাতিয়া, জেলা শহর মাইজদীর নোয়াখালী প্রেসক্লাবের সামনে, নোয়াখালী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সামনে এবং সর্বশেষ চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারের কার্যালয়ের সামনে ও রাজধানী ঢাকার জাতীয় প্রেসক্লাবে সম্মিলিত নোয়াখালীবাসী ও হাতিয়া দ্বীপ সমিতির উদ্যোগে বিক্ষোভ সমাবেশ, মানববন্ধন ও সংবাদ সম্মেলন করা হয়।