কসর নামাজের বিধান
কসর নামাজ আল্লাহর পক্ষ থেকে মুসাফিরদের জন্য একটি বিশেষ রেয়াত। ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, রাসুল (সা.) বলেছেন, “আল্লাহ মুসাফিরের জন্য নামাজ সংক্ষিপ্ত করতে এবং রোজা ভঙ্গ করার অনুমতি দিয়েছেন।” (সুনান নাসাঈ, হাদিস: ১৪৫২)
আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে আছে, “নামাজ প্রথমে দুই রাকাত ফরজ করা হয়েছিল। পরে মুকিমদের (মুসাফির নন এমন) জন্য চার রাকাত করা হয়, কিন্তু মুসাফিরদের জন্য দুই রাকাত রাখা হয়।” (সহিহ বুখারি, হাদিস: ১০৮১)
কসর নামাজের শর্ত
কসর নামাজ আদায়ের জন্য কিছু শর্ত পূরণ করতে হয়:
মুসাফির হওয়া: ব্যক্তিকে মুসাফির হতে হবে। শরিয়তে মুসাফির বলতে এমন ব্যক্তিকে বোঝায়, যিনি নিজ বাসস্থান থেকে প্রায় ৪৮ মাইল (৭৭.২৪ কিলোমিটার বা হানাফি মাজহাব অনুযায়ী প্রায় ৮০ কিলোমিটার) বা তার বেশি দূরত্বের সফরে বের হন।
সফরের উদ্দেশ্য: সফরের উদ্দেশ্য হতে হবে বৈধ, যেমন ব্যবসা, শিক্ষা, হজ, উমরা বা পরিবারের সঙ্গে দেখা করা। হারাম উদ্দেশ্যে (যেমন চুরি বা অনৈতিক কাজ) কসর নামাজের অনুমতি নেই।
সফরের সময়কাল: মুসাফির যদি কোনো স্থানে ১৫ দিনের কম সময় অবস্থান করেন, তবে তিনি কসর নামাজ আদায় করতে পারেন। ১৫ দিন বা তার বেশি থাকার নিয়ত হলে কসর নামাজের অনুমতি নেই।
নামাজের সময়: কসর নামাজ শুধুমাত্র ফরজ নামাজের সময় আদায় করা যায়।
কসর নামাজের নিয়ম
কসর নামাজ আদায়ের নিয়ম সাধারণ ফরজ নামাজের মতোই, তবে রাকাত সংখ্যা সংক্ষিপ্ত করা হয়।
রাকাত সংখ্যা: জোহর, আসর এবং এশার চার রাকাত ফরজ নামাজ দুই রাকাতে সংক্ষিপ্ত করা হয়। ফজর (২ রাকাত) এবং মাগরিব (৩ রাকাত) কসর করা যায় না।
পড়ার পদ্ধতি: সাধারণ ফরজ নামাজের মতোই পড়তে হবে। প্রথম রাকাতে সুরা ফাতিহার পর একটি সুরা, দ্বিতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা বা অন্য সুরা পড়া। দুই রাকাত শেষে সালাম ফিরিয়ে নামাজ সম্পন্ন করা।
জামাতে নামাজ: মুসাফির নয় এমন ইমামের পেছনে নামাজ পড়লে পূর্ণ চার রাকাত পড়তে হবে। তবে একা পড়লে দুই রাকাত কসর করা যায়।
জমা নামাজ: হজের সফরে মুসাফির জোহর ও আসর বা মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে আদায় করতে পারেন (জমা তাকদিম বা জমা তাখির)। জোহরের সময় জোহর ও আসর একসঙ্গে পড়া।
নামাজের পর দোয়া: নামাজ শেষে মুসাফিরের জন্য বিশেষ দোয়া পড়া যায়, যেমন: আল্লাহুম্মা ইন্নি আসআলুকা ফি সাফারি হাজা আল-বিররা ওয়াত তাকওয়া (হে আল্লাহ, আমি এই সফরে তোমার কাছে পুণ্য ও তাকওয়া কামনা করি)। (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ১৩৪৫