আনোয়ার হোসেন আকাশ, রাণীশংকৈল (ঠাকুরগাঁও)প্রতিনিধি: পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র মোহাম্মদ নিবির (১২) হত্যা মামলার আরেক আসামি সাজ্জাদকে গ্রেপ্তারের কয়েক ঘণ্টা পর জামিন দেওয়া হয়েছে। রোববার (২৬ আগস্ট) দুপুরে ঠাকুরগাঁও চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তোলা হলে আদালত তাকে জামিন দেন। এর আগে গতকাল শনিবার রাতে অভিযান চালিয়ে সাজ্জাত (১৪) কে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সাজ্জাত ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার সালন্দর মাদরাসা পাড়ার মোঃ হবি এর ছেলে। তবে স্কুলছাত্র নিবির হত্যা মামলার আসামিকে গ্রেপ্তারের পর জামিন দেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন নিহত নিবিরের স্বজনেরা। স্কুলছাত্র মোহাম্মদ নিবির মাদ্রাসাপাড়ার বাসিন্দা ওমানপ্রবাসী আবদুল সালামের ছেলে। সে সালন্দর কৃষ্ণপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ত। স্বজনদের অভিযোগ ,সাজ্জাতের পরিবার প্রভাবশালী হওয়ায় পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। তাঁরা আসামির পক্ষে মোটা অংকের টাকা নিয়েছে। এতো প্রমাণ থাকার সত্যেও পুলিশ সাজ্জাতকে গ্রেপ্তার করছে না। আমরা বিচারের জন্য গেলে পুলিশ আমাদের অপমান-অপদস্ত করে তাড়িয়ে দেয়। ভুলভাল রিপোর্ট দিয়ে মামলার আসামিদের বাচানোর চেস্টা করছে পুলিশ। তাঁরা আরো বলেন, সন্তান হত্যার বিচার চেয়ে যখন এলাকাবাসীরা রাজপথে নামতে চেয়েছিলো। তখনেই পুলিশের পক্ষে একটা নাটক সাজিয়ে সাজ্জাতকে গ্রেপ্তার করে পরের দিন জামিনের ব্যবস্থা করে দেন। যারা সরাসরি হত্যার সঙ্গে জড়িত। বহু প্রমাণ থাকার সত্যেও কিভাবে জামিন পাই। কেন এখনো তাঁরা প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে? এসময় আদালতের কাছে সন্তান হত্যার বিচার চান নিবিরের স্বজনেরা। এর আগে চলতি বছরের এপ্রিলে বাসা থেকে নিখোঁজ হয় মোহাম্মদ নিবির। পরে বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুঁজি করেও তার কোনো সন্ধান পাওয়া যাচ্ছিল না। এ ঘটনায় তাঁর সন্ধানে এলাকায় মাইকিং করা হয়। পরে নিবিবের মা শিল্পী খাতুন ঠাকুরগাঁও সদর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। পরদিন ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে শিল্পী খাতুন ঘর থেকে দুর্গন্ধ পান। দুর্গন্ধের উৎস খুঁজতে গিয়ে তিনি বাড়ির পেছনে নিবিড়ের লাশ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তিনি প্রতিবেশীদের বিষয়টি জানান। খবর পেয়ে পুলিশ এসে লাশটি উদ্ধার করে। এ ঘটনায় প্রতিবেশী রফিকুল ইসলাম ওরফে মানিক মিয়াকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। রফিকুল ইসলাম পৌর শহরের সালন্দর মাদ্রাসাপাড়ার বাসিন্দা। পুলিশ তাঁর বাড়ি থেকে রক্তমাখা বস্তা, দড়িসহ বিভিন্ন আলামত উদ্ধার করেছিলেন। পরে মানিক এর ছেলে মো: মাহিমকে গ্রেপ্তার করেন পুলিশ। কিন্তু মামলার আরেক আসামি সাজ্জাতকে গতকাল রাতে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও আজ আদালতে সে জামিন পাই। নিহতের মা শিল্পী খাতুন অভিযোগ করে বলেন, এলাকার সাজ্জাদ নামে এক ছেলে আমার ছেলেকে হত্যা করে প্রকাশ্যে ঘুরে বেড়াচ্ছে। মাহিম ও সাজ্জাদ আমার ছেলেকে কুপ্রস্তাব দিয়েছিল। এতে সে রাজি না হওয়ায় তাকে ঘরে আটকে রেখে হত্যা করে। পুলিশ সবকিছু জেনেও কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নিবিরের বাবা আব্দুস সালাম বলেন, আমার ছেলেকে এসিড নিক্ষেপ করে দুই চোখ ও হাত ভেঙে দেওয়া হয়েছে। সাজ্জাদ ও মাহিম যে এ হত্যার সঙ্গে জড়িত তার প্রমাণাদি পুলিশের কাছে আছে। পুলিশ মাহিমকে ধরলেও সাজ্জাদকে রহস্যজনক কারণে ধরছে না। তিনি আরও বলেন, আমি জীবিকার তাগিদে ওমান থাকি। আর পুলিশ আমার পরিবারকে যে নির্যাতন করে তা বলা অসম্ভব। যেদিন ছেলের লাশ উদ্ধার হয় সে রাতে আমার স্ত্রী ও বড় ছেলেকে থানায় আটকে রাখে পুলিশ।