শনিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৪, ০৭:৩৯ অপরাহ্ন

চন্দনাইশে এ্যাম্বুলেন্স চালক হাসানের রহস্যজনক মৃত্যু

রিপোটারের নাম / ১৯৭ বার পড়া হয়েছে
প্রকাশের সময় : বৃহস্পতিবার, ২৪ আগস্ট, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক: চন্দনাইশ উপজেলার কাঞ্চননগর পাক্কা দোকান এলাকার এ্যাম্বুলেন্স চালক হাসান গত ১৯ আগস্ট রহস্যজনকভাবে মৃত্যু সংঘটিত হয়েছে বলে জানা যায়। সে কাঞ্চননগর বাদামতল এলাকার আল শাকরা ডায়াগষ্টিক সেন্টারের এ্যাম্বুলেন্স চালক এবং নগর পাড়া পাক্কা দোকান এলাকার মৃত আবদুর রহিমের ছেলে। হাসানের বোন রহিমা আকতার জানান, চলতি বছর মে মাসে হাসান আল শাকরা ডায়াগষ্টিক সেন্টারে এ্যাম্বুলেন্সের চালক হিসেবে চাকরি নিয়ে তাদের প্রতিষ্ঠানের ৯ তলায় বসবাস করে আসছিল। পরবতীর্তে প্রতিষ্ঠানের মালিক শামসুল আলমের পারিবারিক গাড়ির চালক হিসেবে তার স্ত্রীর গাড়ি চালাত হাসান। প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী শামসুল আলম বিদেশে থাকেন। গত ১৭ আগস্ট হাসান বাসা ও চাকরি ছেড়ে দিয়ে পার্শ্ববর্তী হৃদয় কমিউনিটি সেন্টারে স্ত্রী, সন্তান নিয়ে ২ তলায় ভাড়া নেয়। পরদিন ১৮ আগস্ট হাসানকে শামসুল আলমের স্ত্রী তাদের প্রতিষ্ঠানে ডেকে নিয়ে লোক দিয়ে মারধর করে গুরুতর আহত করে বলে হাসান তার স্ত্রী সুমিকে জানান। বিকাল ৩ টায় সুমির মোবাইল ফোনে কল দিয়ে বলে যে, তার স্বামী পাগলামী করতেছে। হাসানের ১৪ মাসের ২টি জমজ কন্যা সন্তান নিয়ে অনেক কষ্টে সেখানে যায় সিজিম আকতার সুমি। হাসান কান্নাকাটি করে বলে যে, ভালো কাজের কোনো দাম নেই। তাকে তারা অনেক মারধর করে আহত করেছে। সে আল্লাহর কাছে বিচার চাইবে বলে তার স্ত্রীর ফেইসবুক ফেইজে স্ট্যাটাস দেয়। হাসানের স্ত্রী সুমি তার স্বামীর অবস্থা বেগতিক দেখে চিৎকার দিলে স্থানীয় কয়েকজন লোক এগিয়ে আসে। তাদের মধ্যে ২ জন হাসানকে প্রথমে স্থানীয় বিজিসি ট্রাস্ট হাসপাতাল, পরে পটিয়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, সর্বশেষে চমেক হাসাপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থার বেগতিক দেখে পরদিন ১৯ আগস্ট হাসানকে রিলিজ দেয়। হাসানের স্ত্রী সুমি ও শাশুরি হাসানকে প্রবর্তক মোড় ট্রিটমেন্ট হাসপাতালে রহিমাসহ গিয়ে ভর্তি করে। ঐদিন দুপুর ১২ টায় রহিমা হাসানের রক্ত পরীক্ষার জন্য পার্ক ভিউ হাসপাতালে যাওয়ার ১৫ মিনিট পর হাসান মারা যায়। হাসানের পরিবার থেকে নগদ ১০ হাজার টাকা পরিশোধ করে লাশ গ্রামের বাড়িতে এনে দাফন করা হয়। হাসানের স্ত্রী সুমি জানান, তার স্বামীকে একজন মেম্বার মালিকের বাড়ির সামনে মারধর করে গুরুতর আহত করে এবং আল শাকরা থেকে তার বকেয়া বেতন ১০ হাজার টাকা দিয়ে বের করে দেয়। যা চিকিৎসার কাজে ব্যবহার করা হয়। হাসানকে নিয়ে যাওয়ার সময় ২ জন লোক চমেক হাসপাতালে ভর্তি করে তার হাতে ২ হাজার টাকা দেয় বলে সে জানায়। সুমি জানান, তার স্বামীকে মারধর করে হত্যার পর আত্মহত্যা হিসেবে চালানোর পায়তারা করেছে বলে দাবি করেন তিনি। তার সাথে হাসানের ৩ বছর পূর্বে বিয়ে হয় তাদের ঘরে ১৪ মাসের জমজ সন্তান জান্নাতুল মাওয়া ও জান্নাতুল আফরিন নামে ২ কন্যা সন্তান রয়েছে। সে দেওয়ানহাট সুপারি পাড়া এলাকার মৃত আবদুস সবুরের মেয়ে বলে জানান। সুমি এ ২ অবুঝ সন্তান নিয়ে কিভাবে জীবন অতিবাহিত করবেন বলতে বলতে কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। তার অর্থবিত্ত না থাকায় আল্লাহর নিকট বিচার দিয়েছেন বলে জানান। এদিকে শাকরা ডায়াগষ্টিক সেন্টারের সত্ত্বাধিকারী শামসুল ইসলামের স্ত্রী স্থানীয় প্রশাসনসহ এলাকাবাসীকে জিম্মি করে তার স্বামীর লাশ কোনো ধরনের ময়না তদন্ত ছাড়া দাফন করতে বাধ্য করেছেন বলে জানিয়েছেন তিনি। প্রতিষ্ঠানের সত্ত্বাধিকারী শামসুল আলম দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি। তার স্ত্রীর সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে পরদিন সকালে কথা বলার জন্য বলেন। অন্যথায় তিনি কোনো ধরনের বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। প্রতিষ্ঠানের কর্মরত ইউপি সদস্য মো. আলমগীরের সাথে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ঘটনা সম্পর্কে মোবাইল ফোনে বক্তব্য দিতে অস্বীকৃতি জানান। থানা অফিসার ইনচার্জ আনোয়ার হোসেন বলেছেন, তিনি বিষয়টি শুনেছেন। তবে কিভাবে মারা গেছে সঠিকভাবে তথ্য পাওয়া যায়নি এবং হাসানের পরিবারের পক্ষ থেকে কোনো রকম অভিযোগ করেননি বলে জানান। বিষয়টি নিয়ে এলাকায় কানাকানি চললেও ভয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পাচ্ছে না। তবে পরিবারের অসহায়ত্ব দেখে অনেকে অনেকভাবে মন্তব্য করছেন গোপনে। হাসানের বোন রহিমা আকতার ও স্ত্রী সিজিম আকতার সুমি প্রকৃত ঘটনা উৎঘাটনের জন্য যথাযথ কতৃর্পক্ষের সু-দৃষ্টি কামনার পাশাপাশি তাদের জীবনের নিরাপত্তার দাবি জানিয়েছেন।


এই ক্যাটাগরির আরো সংবাদ